দত্তপুকুরে যুবকের মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধারের ঘটনায় সামনে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হজরত লস্করকে খুনের পর পুলিশের হাত থেকে বাঁচতেই সটান জম্মু-কাশ্মীরে পালায় মহম্মদ জলিল গাজি। তার জন্য আগেই ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিল সে। নিজের পরিচয় গোপন করার জন্য সেখানে ভাঙাই জিনিস বেচাকেনার কাজও শুরু করে দেয়।
যদিও তার আসল উদ্দেশ্য ছিল, সীমান্ত টপকে পাকিস্তানে ঢুকে পড়া। কারণ, তাহলে ভারতীয় বিচারব্যবস্থা ও পুলিশের নাগালের বাইরে চলে যেত পারত সে। কিন্তু, বাংলার পুলিশের তৎপরতায় এবং সীমান্তের কড়া পাহারায় তার আর সাহস হয়নি পাকিস্তানে ঢোকার।
উল্লেখ্য, দত্তপুকুর কাণ্ডে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পরই হজরত লস্করকে খুনের কথা স্বীকার করেছিল ধৃত জলিল। সূত্রের দাবি, সে ইতিমধ্যেই পুলিশকে জানিয়েছে, হজরতের মুণ্ড কোথায় ফেলেছে এবং সেই জায়গা সে পুলিশকে দেখিয়ে দেবে বলেও জানিয়েছে। তদন্তকারীদের আশা, শীঘ্রই নিহত হজরত লস্করের কাটা মুণ্ড উদ্ধার করা সম্ভব হবে।
এদিকে, গ্রেফতার করার পর শনিবার (১৫ ফেরুয়ারি, ২০২৫) হজরতকে সঙ্গে নিয়ে (ট্রানজিট রিমান্ড পাওয়ার পর) রাজ্যে ফেরে দত্তপুকুর থানার পুলিশ। ঠিক করা হয়, রবিবারই ধৃতকে আদালতে পেশ করে পুলিশ হেফাজত চাওয়া হবে।
তারই মধ্যে শনিবার বিকেলে বারাসতের এসডিপিও বিদ্যাগর অজিঙ্কা আনন্দ জলিলকে জেরা করেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, জেরা পর্বে তথ্য দেওয়ার নামে নানা ধরনের কথা বলে ও দাবি করে তদন্ত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে জলিল। এর থেকেই পুলিশের অনুমান, সে পাকা মাথার অপরাধী। পুলিশকে সে কয়েকটি নাম বলেছে, যারা নাকি এই খুনের সঙ্গে জড়িত! যদিও পুলিশ এই বিষয়ে এখনই পুরোপুরি নিশ্চিত নয়। তারা সবদিকই খতিয়ে দেখছে।
এরপর শনিবার রাতে ফের একবার জেরার মুখে পড়তে হয় জলিলকে। দত্তপুকুর থানায় গিয়ে তাকে জেরা করেন বারাসতের পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খড়িয়া।
পুলিশ সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, জম্মু-কাশ্মীরে থাকাকালীন আগেভাগেই জলিলের কাছে খবর পৌঁছে গিয়েছিল যে তাকে ধরতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে পুলিশের দল সেখানে যাচ্ছে। তাই সে জম্মুর মূল শহর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। আশ্রয় নেয় সাম্বায়।
এই সাম্বা থেকে জম্মুর দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটার। সেখানে সীমান্ত লাগোয়া সিডকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া রয়েছে। এখান থেকে সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। কিন্তু, সেখানে বিএসএফের পাহারা অত্যন্ত কড়া। তাই, ইচ্ছা থাকলেও সীমান্ত টপকাতে পারেনি জলিল।
এদিকে, গত বুধবার সে যখন সাম্বায় ভাঙাই জিনিসপত্র ফেরি করছিল। তখনই সেখানে পুলিশকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। পালানোর জন্য দৌড় মারে সে। এতে আরও পুলিশের নজরে পড়ে যায় জলিল। এরপরই তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে স্থানীয় আদালত জলিলকে সাতদিনের জন্য পশ্চিমবঙ্গে নিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেয়।