বাংলাদেশে অশান্তি ছড়াতেই এপার বাংলাকেও অশান্ত করতে উঠে-পড়ে লেগেছে নিষিদ্ধ ইসলামি সংগঠন হিজব-উত-তাহরির (সংক্ষেপে - হিজবুত)। তবে, তাদের এই সক্রিয়তা যে সদ্য শুরু হয়েছে, তেমনটা নয়। বরং, চলতি বছরের প্রথম থেকে পশ্চিমবঙ্গের মাটি ব্যবহার করে সন্ত্রাসের ছক কষা হচ্ছ বলে দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এই বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে সংবাদমাধ্যমে লেখালিখি শুরু হয়েছে। তা থেকে জানা যাচ্ছে, কট্টরপন্থী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, জঙ্গিদের এই তৎপরতায় নজর এড়ায়নি ভারতীয় গোয়েন্দাদের। তাই তাঁদের তরফে ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া একাধিক জেলার বিষয়ে রাজ্য প্রশাসনকে সতর্ক করা হয়েছে।
সেই সতর্কবার্তার নিরিখেই উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের মুর্শিদাবাদ এবং নদিয়ায় নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তথ্য বলছে, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলি নিয়ে গোয়েন্দারা নাকি একটু বেশিই চিন্তিত। এর কারণ কী? সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, গত ২৩ মে মালদার মহদিপুর সীমান্ত দিয়ে দুই যুবক বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রবেশ করেন।
ওই দুই যুবকের কাছে বাংলাদেশের বৈধ পাসপোর্ট ছিল। সেই অনুসারে, তাঁদের নাম - আমির এবং মারুফ। তাঁরা বাংলাদেশের রাজশাহীর বাসিন্দা এবং দু'জনই নাকি ছাত্র!
মহদিপুর সীমান্ত থেকে নির্দিষ্ট সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এই দুই যুবক মালদারই বৈষ্ণবনগরের বাসিন্দা এক যুবকের বাড়িতে যান এবং সেখানে কয়েকজনের সঙ্গে বৈঠক করেন। তারপর সেখান থেকে তাঁরা চলে যান মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ানে। সেখানেও একইভাবে কয়েকজনের সঙ্গে বৈঠক করেন ওই দুই বাংলাদেশি যুবক। এরপর গত ৩০ মে তাঁরা বাংলাদেশে ফিরে যান।
সমস্যা হল - কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে এই খবর পৌঁছয় ৩০ মে-র পর। তাঁরা পরবর্তীতে জানতে পারেন, ওই দুই বাংলাদেশি যুবকের মধ্যে আমির আদতে হিজবুতের পুরোনো নেতা। আর তাঁরা মালদার বৈষ্ণবনগরে যে যুবকের বাড়িতে প্রথম বৈঠকগুলি করেছিলেন, সেই যুবক একটা সময় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন সিমি-র সঙ্গে যুক্ত ছিলেন!
এই তথ্য হাতে আসার পরই রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে গোয়েন্দাদের। অনুমান করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে বসবাসকারী পরিযায়ী শ্রমিকদের মগজধোলাই করে তাঁদের দলে টানতে চাইছে হিজবুত।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের হাতে আসা তথ্য অনুসারে, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়ায় হিজবুত অত্যন্ত শক্তিশালী। হাসিনা সরকারের পতনের পড়শি রাষ্ট্রে তাদের দাপাদাপি আরও বেড়েছে।
হিজবুতের প্রধান লক্ষ্য হল - খিলাফত - অর্থাৎ, ইসলাম অনুসারে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা কায়েম করা। যেখানে শরিয়ত আইন বলবৎ করা যাবে। আর তার জন্য সবকিছু করতে প্রস্তুত তারা।
বাংলাদেশে বহু আগে থেকেই এই সংগঠন নিষিদ্ধ। গত ১০ অক্টোবর ভারতও হিজবুতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই অবস্থায় পশ্চিমবঙ্গে হিজবুতের স্লিপার সেল সক্রিয়তা ক্রমশ বাড়াচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তাদের সঙ্গে হুজি এবং জেএমবি-র পুরোনো নেটওয়ার্কও কাজে লাগানো হচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
উপরন্তু, হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশের অন্দরে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর প্রত্যক্ষ মদতে তাদের মতবাদ ও উদ্দেশ্য প্রচার করতে শুরু করেছে হিজবুত। রীতিমতো বৈঠক, আলোচনা করছে তারা।
এদিকে, সম্প্রতি উত্তরবঙ্গের সীমান্তে ড্রোন ওড়াতে দেখা গিয়েছে বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী - বিজিবি -কে। ফলত, উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির সীমান্ত এলাকায় প্রশাসনকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা।