শুধুমাত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ায় চলন্ত ট্রেনে এক ব্যক্তিকে চরম হেনস্থা ও মারধর করার অভিযোগ উঠল নিত্যযাত্রীদের একাংশের বিরুদ্ধে! গুরুতর এই অভিযোগটি সামনে এসেছে একটি সোশাল মিডিয়া পোস্টের সৌজন্যে। গত মঙ্গলবার রাতে সেই পোস্টটি সকলের নজরে আসে।
যিনি এই পোস্ট করেছেন, সেই ব্যক্তির দাবি, সংখ্যালঘু যাত্রীকে নির্যাতনের এই ঘটনাটি ঘটেছে গত মঙ্গলবারই সকালে। ওই দিন সকাল ৮টা বেজে ৪৫ মিনিট নাগাদ ৩১৯১৮ ডাউন গেদে-শিয়ালদা লোকালে উঠেছিলেন এক যাত্রী। তাঁর পরনের পোশাক এবং দাড়ি দেখেই তাঁকে সংখ্যালঘু বলে অনুমান করা হয়।
সংশ্লিষ্ট পোস্টে দাবি করা হয়, ট্রেনে ওঠার পর ওই ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে থাকা ব্যাগপত্তর বাঙ্কে তুলে রাখেন। আর তারপরই ট্রেনে সওয়ার প্রায় ১০-১২ জন নিত্যযাত্রী সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক নানা ধরনের মন্তব্য করতে থাকেন। ট্রেনে ওঠা সংখ্যালঘু ব্যক্তিকে দেখেই তাঁরা এমন আচরণ শুরু করেন বলে অভিযোগ।
এরপর, ওই নিত্যযাত্রীদের এহেন আচরণের প্রতিবাদ করায় ওই সংখ্যালঘু যাত্রীর উপর চড়াও হন অভিযুক্তরা। তাঁকে মারধর করা হয়। সিট থেকে তুলে সরিয়ে দেওয়ারও চেষ্টা করা হয়!
যে ব্যক্তি এই পোস্ট করেছেন, তাঁর আরও দাবি, এর আগে রানাঘাট থেকে শিয়ালদাগামী ট্রেনেও দুই দাড়িওয়ালা সংখ্যালঘু শ্রমিককে জোর করে তাঁদের আসন থেকে তুলে দেওয়া হয়েছিল! তিনি নিজে সেই ঘটনার সাক্ষী!
খুব স্বাভাবিকভাবেই সোশাল মিডিয়ায় এই পোস্ট দেখে নেট নাগরিকদের একটা বড় অংশ প্রতিবাদ করেছেন। বিষয়টি রেল পুলিশেরও নজরে এসেছে। যদিও শেষ পাওয়া খবর অনুসারে, তাদের কাছে এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলেই জানা গিয়েছে।
যদিও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, আরপিএফ স্বতঃপ্রণোদিতভাবেই এই অভিযোগ খতিয়ে দেখছে। বিভিন্ন স্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে আক্রান্ত ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
তবে, মঙ্গলবার সকালে যে সংখ্যালঘু যাত্রী হেনস্থার শিকার হয়েছিলে বলে অভিযোগ, এখনও পর্যন্ত তাঁর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি।
বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে রানাঘাট প্যাসেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বোধিসত্ত্ব চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাঁকে উদ্ধৃত করে সংবাদমাধ্যমে যে কথা লেখা হয়েছে, তাতে এটা স্পষ্ট যে শুধুমাত্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ভুক্ত হওয়ার কারণে নিত্যযাত্রীদের একাংশ কোনও সহযাত্রীর উপর হামলা করেছেন, এমন অভিযোগ শুনে তিনিও হতবাক। তাঁর কথায়, 'শুধুমাত্র সংখ্যালঘু হওয়ার কারণে আক্রোশের শিকার হতে হয়েছে, এমন অভিযোগ আগে শুনিনি।'
যদিও নিত্যযাত্রীদের একাংশের হাতে যে মাঝেমধ্যে অন্য রেলযাত্রীরা হেনস্থার শিকার হন, একথা অস্বীকার করেননি তিনি। বোধিসত্ত্ব জানিয়েছেন, তাঁদের কাছেও এই ধরনের অভিযোগ মাঝেমধ্যে আসে।