পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনিতে যে জিন্দলরা বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থা গড়তে চলেছে, সেই সিদ্ধান্ত মাসখানেক আগেই নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। কারণ, তখনই রাজ্য সরকারের তরফে ১৬ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে সিলমোহর দেওয়ার কাজ সারা হয়ে গিয়েছিল। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, নবান্নের একটি সূত্র মারফত এই তথ্য সামনে এসেছে।
যদিও গত ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মঞ্চে এই প্রকল্প নির্মাণ ও তাতে বিনিয়োগের কথা ঘোষণা করেন জেএসডব্লিউ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান সজ্জন জিন্দল।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানা গিয়েছে, শালবনিতে পিপিপি মডেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার জন্য গত বছরের নভেম্বর মাসে রাজ্য বিদ্যুৎ দফতরের পক্ষ থেকে টেন্ডার ডাকা হয়। তাতে মোট তিনটি সংস্থা অংশ নেয়। সেগুলি হল - জেএসডব্লিউ গোষ্ঠী, আদানি পাওয়ার এবং টরেন্ট পাওয়ার। এই তিনটি সংস্থার মধ্যে সবথেকে কম দামে দরপত্র দেয় সজ্জন জিন্দলের সংস্থা। সেই কারণেই তাদের এই প্রকল্পের বরাত দেওয়া হয়। সেই কাজ প্রায় একমাস আগে সারা হয়।
প্রসঙ্গত, শালবনিতে জেএসডব্লিউ গোষ্ঠীর আগমন এই প্রথম নয়। এর আগেও তারা শালবনিতে ইস্পাত প্রকল্প তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। সেই প্রস্তাবিত প্রকল্পের জন্য জেএসডব্লিউ গোষ্ঠীর হাতে প্রায় ৪ হাজার একর জমি তুলে দিয়েছিল রাজ্য সরকার। পরবর্তীতে সেই প্রকল্পের জন্যই আরও ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়।
কিন্তু, সবটাই বৃথা যায়। কারণ, জিন্দলরা সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত করেনি। বদলে ওই বিপুল পরিমাণ জমির কিছুটা অংশ ব্যবহার করে একটি সিমেন্ট কারখানা তৈরি করে তারা। বর্তমানে সেই প্রকল্প এলাকায় অর্ধেকেরও বেশি জমি খালি পড়ে রয়েছে। পরবর্তীতে জিন্দলের সংস্থা জানায়, তারা ওই অব্যবহৃত জমি রাজ্যকে ফিরিয়ে দিতে প্রস্তুত।
কিন্তু, রাজ্য সরকার ওই ফাঁকা জমি ব্যবহার করেই পিপিপি মডেলে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়। তার জেরেই টেন্ডার ডাকা হয়, প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য যাতে কয়লার জোগান পেতে কোনও সমস্যা না হয়, তার জন্য কোল ইন্ডিয়ার সঙ্গে কোল লিঙ্কেজও করিয়ে দেয় রাজ্য সরকার।
এই প্রকল্পে যে চুক্তি করা হয়েছে, সেই অনুসারে - শালবনির কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হলে ২০৩০ সাল থেকে উৎপাদিত বিদ্যুতের সবটাই কিনে নেবে রাজ্য সরকার। তাতে তাদের ইউনিট প্রতি বিদ্যুতের দাম দিতে হবে ৫ টাকা ৪৫ পয়সা।
অথচ, ঘটনা হল - বর্তমানে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা প্রায় ৪ টাকা ৫০ পয়সা প্রতি ইউনিট দরে বিদ্যুৎ কেনে। প্রশ্ন হল, তাহলে শালবনির নয়া কেন্দ্র বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে রাজ্যের কী লাভ হবে?
সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, শালবনির নয়া কেন্দ্র থেকে বিদ্যুতের সরবরাহ নিশ্চিত হলে রাজ্যে বিদ্যুতের চাহিদা ও জোগানের ফারাক অনেকটাই কমিয়ে আনা যাবে। এবং তার ফলে রাজ্যের আর্থিক লাভও হবে।
যেমন - গত বছর গ্রীষ্মের সময় যেখানে শুধুমাত্র মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় বিদ্যুতের সর্বোচ্চ দৈনিক চাহিদা ছিল ১০ হাজার মেগাওয়াটেরও বেশি। অথচ, পশ্চিমবঙ্গ বিদ্যুৎ উন্নয়ন নিগম এবং বণ্টন সংস্থার নিজস্ব উৎপাদন মিলিয়ে মেরেকেটে ৬ হাজার মেগাওয়াটের মতো বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছিল।
বাকিটার জন্য এনটিপিসি, ডিভিসি-র মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার উপর নির্ভরশীল যেমন হতে হয়েছিল, তেমনই খোলাবাজার থেকে অত্যন্ত বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনতেও হয়েছিল রাজ্যের সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে। এই কারণেই রাজ্যে নয়া একটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে তোলা আবশ্যিক বলে মনে করছিল সরকার। কিন্তু, টাকার অভাব থাকায় এই প্রকল্পের জন্য পিপিপি মডেল বেছে নেওয়া হয়। যা বিদ্যুৎ উৎপাদন তৈরির ক্ষেত্রে রাজ্য প্রথম বলেই দাবি সংশ্লিষ্ট সূত্রের।