ছাত্রছাত্রীদের ট্যাব কেনার জন্য রাজ্য সরকার যে টাকা বরাদ্দ ও বণ্টন করেছিল, সেই বিপুল পরিমাণ অর্থ লোপাট হল কীভাবে? সেই ঘটনার তদন্তে নেমে চোখ কপালে ওঠার জোগাড় হয়েছে তদন্তাকারীদের। কারণ, রীতিমতো পরিকল্পনা করে, জোট বেঁধে ও প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই দুর্নীতি ও লুট করা হয়েছে।
কিন্তু, প্রশ্ন হল - যারা দু'নম্বরি করে, তারা তো বেআইনি কাজ করবেই, সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, টাকা হাতাতে এত বিপুল পরিমাণে আমজনতার অ্য়াকাউন্ট ব্যবহার হল কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে সামনে আসছে আরও এক বিশেষ ধরনের জালিয়াতির ছক। যা ছকা হয়েছিল - তথাকথিত 'কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট' বা সিএসপি-এর আড়ালে। বাংলায় যাকে বলে গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র।
ট্যাব দুর্নীতির জেরে এই বিষয়টি নিয়েও সংবাদমাধ্যমে অনেক লেখালিখি হচ্ছে। বিভিন্ন রিপোর্ট ঘেঁটে যেসমস্ত তথ্য সামনে আসছে, তাতে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ মনে করছে, এই জালিয়াতদের কাজ করার ধরন দেখলে বিহারের কুখ্যাত 'জামতাড়া গ্যাং'-এর কথা মনে পড়ে যেতেই পারে।
সূত্রের দাবি, ছাত্রছাত্রীদের জন্য বরাদ্দ ট্যাবের টাকা হাতাতে, সংশ্লিষ্ট সরকারি পোর্টালে লগ ইন করার জন্য বিভিন্ন স্কুলকে দেওয়া আইডি ও পাসওয়ার্ড জোগাড় করতে শুরু করে প্রতারকরা।
বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী চোপড়া ও আশপাশের গ্রামগুলিতে খোলা হয় তথাকথিত কিছু গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র বা সিএসপি। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এলাকায় রটিয়ে দেওয়া হয়, ওই সিএসপি-গুলিতে গিয়ে কোনও স্কুলের ট্যাব বিতরণের পোর্টালের আইডি ও পাসওয়ার্ড জানাতে পারলেই অনেক টাকা পাওয়া যাবে! এভাবে নাকি অনেক আইডি ও পাসওয়ার্ড বিক্রিও করা হয়েছিল।
এছাড়াও, স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় হঠাৎ করে কিছু যুবকের আনাগোনা বেড়েছিল। তারা সবাই দামি বাইক চড়ে ঘুরে বেড়াত, হাতে দামি স্মার্টফোন রাখত! এই যুবকেরা ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার নাম করে বাসিন্দাদের আধার কার্ড, প্য়ান কার্ড-সহ নানা জরুরি তথ্য হাতিয়ে নিত।
পরে সেইসব তথ্য ব্যবহার করে বেআইনিভাবে সিম কেনা থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের 'বাংলার শিক্ষা' পোর্টালে ঢুকে বেআইনি লগ ইন, সবই করা হয়েছে। এমনকী, বহু বাসিন্দাকে বলা হয়েছিল, তাঁদের নামে যে নয়া ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট খুলে দেওয়া হচ্ছে, সেগুলি ভাড়া দিলে মোটা টাকা পাওয়া যাবে।
বদলে বাসিন্দাদের শুধু মুখ বন্ধ রাখতে হবে। অর্থাৎ - ট্যাবের জন্য বরাদ্দ টাকা এসে জমা হবে সেইসব অ্য়াকাউন্টে। আর সেখান থেকে সেই টাকা তুলে নেবে জালিয়াতরা। পরিবর্তে প্রত্যেক লেনদেনের জন্য ওই ভাড়া দিতে ইচ্ছুক অ্য়াকান্ট হোল্ডার ৪০০ থেকে ৩,০০০ টাকা পাবেন!
ট্যাব দুর্নীতি নিয়ে তদন্ত শুরু হতেই বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী সেইসব গ্রামে রাতারাতি গজিয়ে ওঠা গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বাইকে চড়ে, দামি মোবাইল হাতে নিয়ে এলাকায় ঘুরঘুর করা যুবকদেরও আর দেখা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, রাজ্য পুলিশ এখনও পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি ব্যাঙ্ক অ্য়াকাউন্ট 'ফ্রিজ' করেছে। উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ৬৮ লক্ষ টাকা। তারপর অভিযোগ আর মামলার সংখ্য়া বাড়ছে!