ব্যথার জন্য সূচ ফোটাতে ভয়? আর যদি ব্যাথাই না হয়! এমনই এক সূচ আবিষ্কার করলেন আইআইটি খড়গপুরের গবেষকরা। চিকন চুলের চেয়েও সরু সেই সূচ। কারণ, মানুষের চুল যেখানে ৫০–৭০ মিলিমিটার ঘন, সেখানে এই সূচের ঘনত্ব মাত্র ৫৫ মিলিমিটার। এর সঙ্গে মানানসই এক পাম্পও আবিষ্কার করে ফেলেছেন দেশের অন্যতম সেরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একদল গবেষক। সেটিকে তাঁরা বলছেন মাইক্রো পাম্প। সূচটিও অবশ্য মাইক্রো নিডল নামে অবিহিত।
আইআইটি খড়গপুরের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গবেষকদের দাবি, ওই অতি চিকন সূচ চামড়ার মধ্যে অতি সূক্ষ্মভাবে প্রবেশ করে শরীরে ওষুধ সরবরাহ করতে সক্ষম এবং তাতে এক ফোটাও ব্যথা হয় না। উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র–সহ বেশ কয়েকটি দেশে এই ট্রান্সডার্মাল অর্থাৎ চামড়ার এপার থেকে ওপারে ওষুধ সরবরাহের ব্যথাহীন উপায় খুবই জনপ্রিয় ও বহুল ব্যবহৃত।
যেভাবে প্রচলিত সিরিঞ্জে তরলীকৃত মেডিসিন ভরে তা পাম্প করে সূচের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো হয়, এ ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই রকম, মাইক্রো পাম্পে চাপ দিয়ে মাইক্রো নিডল দ্বারা ওষুধ ঢুকবে শরীরে। কিন্তু সে ক্ষেত্রে এতটুকু ব্যথা হবে না বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। তাঁরা জানান, যে সূচ তাঁরা আবিষ্কার করেছেন তা এতটাই সরু যে শরীরের কোনও স্নায়ুতে তার প্রভাব পড়ে না, তাই ব্যথাও হয় না।
অধ্যাপক তরুণকান্তি ভট্টাচার্য বলছিলেন, ‘আমরা উচ্চ ক্ষমতার কাঁচযুক্ত কার্বনের তৈরি মাইক্রো সূচগুলি তৈরি করেছি যা ত্বকের প্রতিরোধী শক্তিকে রুখতে পারে। আর মাইক্রো পাম্প একটি নিয়ন্ত্রিত এবং সুনির্দিষ্ট পদ্ধতিতে ওষুধের অণুগুলির প্রবাহের হার বাড়াতে সহায়তা করে। নিয়ন্ত্রিত মেডিসিন সরবরাহের জন্য আমরা এই মাইক্রো সূচ এবং মাইক্রো পাম্পটির ওপর আরও বেশি করে কাজ করেছি।’
প্রকল্পটিকে আর্থিক সহায়তা করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগ। শুক্রবার আইআইটি খড়গপুরের তরফ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, মেডিক্যাল প্রোটোকল অনুযায়ী ওষুধ সরবরাহকারী এই মাইক্রো নিডল ও মাইক্রো পাম্প প্রাণীদের ওপর সফলভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষকরা ইতিমধ্যে এটির পেটেন্টের জন্য আবেদনও জানিয়েছেন। প্রতিষ্ঠানের এই সাফল্যের কথা নেচার জার্নাল ও আইইইই–তে প্রকাশিত হয়েছে।