প্রশাসনের তরফে বার বার সতর্ক করা সত্বেও কিছু মানুষের কানে কথা ঢোকার কোনও লক্ষণ নেই। যার জেরে ফের একবার নাড়া পোড়াতে গিয়ে পুড়ল জমির পাকা ধান। বাঁকুড়ার কোতুলপুরে এই ঘটনায় অভিযুক্ত চাষির বিরুদ্ধে কার্যত ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন অন্য চাষিরা। ক্ষতিগ্রস্ত চাষি জানিয়েছেন, এরা নিজের সর্বনাশ তো করছেই, আগামী প্রজন্মকে উপহার দিয়ে যাচ্ছে দূষিত বাতাস আর প্রাণঘাতী বায়ু?
জয়পুরের পর এবার বাঁকুড়ার কোতুলপুরে নাড়া পোড়ানোর সময় পুড়ে ছাই হয়ে গেল প্রায় ৫ বিঘা জমির পাকা ধান। বাদশাভোগ প্রজাতির দামি পাকা ধান মাঠেই পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। কৃষি দফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের লাগাতার প্রচার সত্বেও এই ধরনের ঘটনার পিছনে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশাসনের নজরদারির অভাব ও কৃষকদের অসচেতনতাই দায়ী বলে মনে করছে স্থানীয় কৃষককূল।
দিন কয়েক আগে বাঁকুড়ার জয়পুর ব্লকের শুখজোড়া গ্রাম লাগোয়া জমিতে নাড়া পোড়ানোর সময় আগুনের ফুলকি গিয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী জমির ধানে। দাউদাউ আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায় কয়েক বিঘা জমির ধান। আগুন নেভাতে গিয়ে আহত হন এক কৃষক। এবার সেই একই ঘটনা ঘটল বাঁকুড়ার কোতুলপুর ব্লকের সিহাস গ্রাম লাগোয়া জমিতে। জমি থেকে ধান ওঠার পর আলু চাষের জন্য দ্রুত জমি তৈরির উদ্দেশে জমিতে পড়ে থাকা ধান গাছের অবশিষ্টাংশ বা নাড়ায় আগুন লাগিয়ে দেয় এক কৃষক। দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়তে থাকে আশপাশের জমিতে। বাতাসের বেগ বেশি থাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী মাঠে যেখানে বাদশাভোগ প্রজাতির পাকা ধান এখনো কাটা হয়নি। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রায় ৫ বিঘে জমিতে থাকা বেশ দামি ওই ধান আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যায়। পরে খবর পেয়ে স্থানীয় কৃষকরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান কৃষি দফতরের আধিকারিকরাও।
কিন্তু এত প্রচার এবং বার বার দুর্ঘটনার পরেও কেন নাড়া পোড়ানো থেকে বিরত করা যাচ্ছে না কৃষকদের? স্থানীয়দের একাংশের দাবি, চাষাবাদে প্রতিযোগিতামূলক মনোভাব এবং সচেতনার অভাবেই প্রথাগত ভাবে নাড়া পুড়িয়ে চলেছেন এক শ্রেণির কৃষক। এজন্য কৃষি দফতরের নজরদারির অভাবকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ।
ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক বলেন, আমার যা যাওয়ার তো গেছে। সে নয় টাকা দিয়ে মিটমাট হয়ে যাবে। কিন্তু নাড়া পুড়িয়ে যারা বায়ুদূষণ ছড়াচ্ছে তারা আগামী প্রজন্মের জন্য কী রেখে যাচ্ছে ভেবে দেখা দরকার। নাতি নাতনিদের জীবনভরের জন্য দূষিত বাতাস আর শ্বাসকষ্ট উপহার দিয়ে যাচ্ছে তারা। এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের আরও কঠোর পদক্ষেপ করা দরকার।