দিনের বেশিরভাগ সময় ক্রাইম পেট্রল দেখত যুবকটি। কেন দেখত? তা কেউ জানত না। আর সেই ‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখেই নিজের বন্ধুকে খুনের পরিকল্পনা করেছিল সে। আর তারপরই হুগলি জেলার রিষড়া এলাকাতে নেমে এসেছিল শিহরণ জাগানো হত্যা কাণ্ড। বন্ধুকে ছুরি মেরে খুন করেছে সুজল সাউ বলে অভিযোগ। রিষড়ায় যুবক খুনের ঘটনায় ধৃতকে নিয়ে এবার খুনের পুনর্নির্মাণ করল জেলা পুলিশ। একটি পুকুর থেকে তারপরই উদ্ধার হয়েছে ভোজালি। ‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখেই খুনের ছক বলে মনে করছে পুলিশ। হুগলির রিষড়ায় ২২ বছরের যুবক অভিষেক পাসোয়ানের খুনের তদন্তে নেমে এই তথ্যই পেয়েছে পুলিশ।
এদিকে কাজ হারাবার পর বন্ধুর উপর রাগ তৈরি হয়েছিল। আর সেই রাগের জেরেই অস্ত্র দিয়ে অভিষেক পাসোয়ানকে খুন করে যুবক সুজল সাউ বলে অভিযোগ। আর এই খুনের নেপথ্যে গোটা পরিকল্পনাটাই তৈরি হয়েছিল ‘ক্রাইম পেট্রল’ অনুষ্ঠান দেখে। আর ১৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় রিষড়ায় খুন হন কলেজ ছাত্র অভিষেক পাসোওয়ান। ওই রাতেই অভিষেকের দিদি সবিতা পাসোয়ান রিষড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। খুনের তদন্ত শুরু করে পুলিশ। ১১ ফেব্রুয়ারি রিষড়ার পিএল মুখার্জি রোড থেকে সুজল সাউকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতকে এবার শ্রীরামপুর মহকুমা আদালত তোলা হলে তাঁর সাতদিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
আরও পড়ুন: নিয়ম ভেঙে পরপর চারবার জেলা সম্পাদক, না–পসন্দ হওয়ায় সিপিএম ছাড়ল ৫০০ কমরেড
অন্যদিকে আজ, সোমবার দুপুরে অভিযুক্ত সুজল সাউকে নিয়ে গিয়ে ঘটনাস্থলে পুনর্নির্মাণ করে পুলিশ। ধৃতের দেখানো মতো পাশের একটি পুকুর থেকে উদ্ধার হয় ধারালো ভোজালি। যা খুনে ব্যবহার হয়েছিল বলে মনে করছে পুলিশ। মৃত অভিষেক পাসোয়ানের দিদি সবিতা পাসোয়ান বলেন, ‘আমার ভাই খুব ভাল ছিল। রেশন দোকানে কাজ করত। আবার সেই অর্থ দিয়ে কষ্ট করে কলেজে পড়ত। সেই কাজ নিয়ে দু’জনের মধ্যে বিবাদ হতেই সুজল আমার একমাত্র ভাইকে খুন করে। ওর মতো হত্যাকারীর ফাঁসি চাই।’ ‘ক্রাইম পেট্রল’ দেখেই বন্ধু অভিষেককে তার বাড়ির কাছে পিছন থেকে ভোজালি মেরে খুন করে সুজল বলে অভিযোগ।
এছাড়া অভিষেক আর সুজল আগে ‘ভাল বন্ধু’ ছিল। সুজল একটি রেশন দোকানে কাজ করত। সেই কাজটি হঠাৎ চলে যায়। অভিষেকও পরিবারের আর্থিক অনটনের জন্য পড়াশোনার সঙ্গে একটি দোকানে কাজ করত। কিছু দিন পড়াশোনার জন্য ব্যস্ত থাকায় ওই কাজটি ছেড়ে দেয় অভিষেক। তখন ওই দোকানে কাজ পায় সুজল। কিছুদিন পর অভিষেক আবার পুরনো কাজে যোগ দেয়। তখন সুজলের কাজ চলে যায়। সুজল তখন অভিষেককে জানিয়েছিল, তার কাজটা খুব দরকার। অভিষেক তখন সুজলকে অন্য একটি কাজ দেখে দেবে বললেও তা হয়ে ওঠেনি। সেখান থেকেই রাগ এবং অন্তিমে খুন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। অভিষেক যখন কাজ করে ফিরছিল তখন বাড়ির কাছেই পিছন থেকে ভোজালি মেরে তাকে খুন করে সুজল। তারপর এলাকা থেকে চম্পট দেয়। পুলিশ তদন্তে নেমে সিসিটিভি ফুটেজ এবং ফোনের টাওয়ার লোকেশান ট্র্যাক করে ২৮ দিন পর সুজলকে গ্রেফতার করে।