কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে সদ্য নির্মিত রূপনারায়ণ নদীর বাঁধ ভরসা দিল মাত্র এক মাস। পূর্ব মেদিনীপুরের মহিষাদলের বাড় অমৃতবেড়িয়ার পূর্বপল্লিতে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ধীরে ধীরে নদীবাঁধে ধস নামতে শুরু করে। প্রথমে দুই-তিন ইঞ্চি বসে যাওয়া বাঁধ, রাত বাড়তেই এক ফুট, তারপর রাত আটটার মধ্যে প্রায় পাঁচ ফুট নেমে যায়। পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয় গভীর রাতে। রাত ১২টার মধ্যে প্রায় ৭০ ফুট জুড়ে বাঁধ অন্তত ১০ ফুট বসে যায়। মুহূর্তে এলাকায় আতঙ্ক, বাড়ি থেকে মানুষ দৌড়ে এসে ভিড় করেন ঘটনাস্থলে।
আরও পড়ুন: টানা ১৭ দিন ধরে জলছাড়া অব্যাহত, রাজ্যের আপত্তি সত্ত্বেও পরিমাণ বাড়াল DVC
জানা যাচ্ছে, সেদিনই বিজয়া সম্মিলনীর জন্য তমলুকে উপস্থিত ছিলেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। খবর পেয়ে তিনি একাধিকবার ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রাতেই পৌঁছে যান সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত সরকার, বিডিও বরুণাশিস সরকার, ডিএসপি (ডিইবি) শান্তব্রত সরকার এবং থানার ওসি। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় রাতভর বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু হয়। শুক্রবারও সেই কাজ চলতে থাকে পূর্ণোদ্যমে। দুপুরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজী ও হলদিয়ার মহকুমাশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়।
সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, নদীর প্রকৃতি এখনই বড় চিন্তার বিষয়। রূপনারায়ণের মাঝ বরাবর তৈরি হয়েছে বিশাল চড়া, অথচ বাঁধের পাশে গভীরতা ক্রমেই বাড়ছে। সাম্প্রতিক এডিসিপি সার্ভে অনুযায়ী, নদীর পাশ বরাবর ৯ থেকে ১০ ফুট গভীরতা অর্থাৎ বাঁধের গোড়া ক্রমে দুর্বল হচ্ছে। ঠিক দুই কিলোমিটার দূরে নন্দীগ্রাম জলপ্রকল্পের ইনটেক পয়েন্ট তৈরি হচ্ছে এডিবি-র আর্থিক সহায়তায়। ওই প্রকল্প চালু হলে এই বাঁধে স্রোতের চাপ আরও বাড়বে, আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসেও এই একই এলাকায় বাঁধে ধস নেমেছিল। তবু পুনর্গঠনের কাজে কয়েক কোটি টাকা খরচ করে প্রায় ২১০০ মিটার জুড়ে নতুন কাঠামো তৈরি করা হয়। নদীতে খাঁচা ফেলে কংক্রিটের কাজ হয়েছিল। কিন্তু মাত্র এক মাসের মধ্যেই সেই বাঁধ ভেঙে পড়ল হুড়মুড়িয়ে। ধসের উল্টোদিকে রয়েছে একটি বড় পুকুর, যা মাটি দুর্বল করে বিপর্যয় ডেকে এনেছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। বর্তমানে এলাকাটি ঘিরে রয়েছে পুলিশ ও সিভিক ভলান্টিয়ার। যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ। ৫০ জনেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন দিনরাত এক করে। ঘটনাস্থল থেকে জেলা শাসক পূর্ণেন্দু মাজী বলেন, রাত ১২টার সময় ৭০ ফুট বাঁধ বসে যায়। গ্রামে জল ঢোকার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। খবর পাওয়ামাত্রই সব দফতর একযোগে কাজে নামে। আপাতত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে। জল কমলেই স্থায়ীভাবে বাঁধকে শক্তিশালী করার পরিকল্পনা আছে। স্রোত প্রবল হওয়ায় এলাকা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ বলেই তিনি উল্লেখ করেন। সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও পরিস্থিতির নজরদারিতে রয়েছেন, যেকোনো সময় তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসতে পারেন।