গত তিন মাসে করোনা সংক্রমণের জেরে লকডাউনের শিকার পরিযায়ী শ্রমিক এবং ঘূর্ণিঝড় আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও ওষুধ দিয়ে সাহায্য করার বিষয়ে বড়সড় পদক্ষেপ করেছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)। তাদের অভিযোগ, জোড়া দুর্যোগে আক্রান্তদের যথাযথ সাহায্য করতে ব্যর্থ পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার।
লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার কারণে নিয়মিত বৈঠক করতে না পারলেও ত্রাণকাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন সংগঠনের সদস্যরা। হিন্দুস্তান টাইমস-কে রাজ্যের আরএসএস সাধারণ সম্পাদক যিষ্ণু বসু বলেন, ‘ভারতে এ যাবৎ সবচেয়ে খারাপ কিছু হয়ে থাকলে তা করোনা সংক্রমণ। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত দুর্গতদের সাহায্য করা।’
ইতিমধ্যে লকডাউন আক্রান্ত পরিযায়ী শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে হেল্প ডেস্ক চালু করেছে আরএসএস-এর ট্রেড ইউনিয়ন শাখা ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)। রাজ্যজুড়ে ৩৮টি হেল্প ডেস্ক চালু করেছে সংগঠন। পরিযায়ী শ্রমিকদের ব্যক্তিগত তথ্য জোগাড় করে তাঁদের জন্য কাজের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া, শ্রমিক ইউনিয়নের মাধ্যমে ২৩ জেলার ৬৬৫টি জায়গায় ১.৬২ লাখ শ্রমিক পরিবারকে ইতিমধ্যে ত্রিপল, খাদ্য ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ করা হয়েছে, জানিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য কার্যনির্বাহী সভাপতি রবি সিং।
আরএসএস-এর চিকিৎসকদের সংগঠন ন্যাশনাল মেডিকোস অর্গানাইজেশন-এর তরফে এ পর্যন্ত পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার আমফান আক্রান্তদের জন্য ৮০টি মেডিক্যাল ক্যাম্পের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেখানে এখনও পর্যন্ত ২৫,০০০ মানুষের চিকিৎসা হয়েচে বলে জানিয়েছেন সংগঠনের রাজ্য সভাপতি চিকিৎসক প্রভাত সিং।
আরএসএস সমর্থিত দেশব্যাপী সমবায় উদ্যোগ ‘সহকার ভারতী’র অধীনে কৃষি ও মৎস্যচাষ সংক্রান্ত সমবায়ের মাধ্যমে একাধিক সমবায় গড়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, ওড়িশা ও আন্দামের দায়িত্বে থাকা সংগঠনের সম্পাদক বিবেকানন্দ পাত্র। পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবারকে সাহায্য করতে কোমর বেঁধে নেমেছে এই সমবায় সংগঠন।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আরএসএস-এর তরফে এই ত্রাণ উদ্যোগ ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে বড় সাফল্য এনে দিতে পারে। এর আগে গুজরাত, মহারাষ্ট্র, অসম-সহ একাধিক রাজ্যে এই মানবাধিকারমুলক কাজের প্রেক্ষিতেই ভোটে সাফল্য লাভ করেছে কেন্দ্রের শাসক দল।
প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ অমল কুমার মুখোপাধ্যায়ের মতে, লকডাউন ও আমফান কবলিতদের সাহায্যে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ করেছে আরএসএস। তাঁর দাবি, ‘তৃণমূল কর্মীরা এমন কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করছেন না। তাঁরা বরং ত্রাণ হিসেবে রাজ্যের খাতায় আসা অর্থ নিজেদের পকেটে ঢোকাতে বেশি উৎসাহী।’
অধ্যাপক মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘আরএসএস-এর মতাদর্শে আমি বিশ্বাসী নই, কিন্তু এই সমস্ত ত্রাণ কাজের সুবাদে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে বিজেপির ঘাঁটি শক্ত হচ্ছে। আরএসএস ত্রাণমূলক কাজ চালিয়ে গেলে আগামী নির্বাচনে তার ফায়দা লুটতে উদ্যোগী হবে বিজেপি।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতা অবশ্য জানিয়েছেন, ‘২০১১ সালে প্রধানত বাম-বিরোধী ভোটের জোরেই আমরা মজবুত ক্যাডারভিত্তিক বাম শাসনের অন্ত ঘটাতে সফল হয়েছিলাম। আগামী যুদ্ধে বিজেপির বিরুদ্ধে আমাদের হাতিয়ার হবে তৃণমূল সরকারের কাজের খতিয়ান।’