দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব দেখেছেন সকলেই। তৃণমূলের কর্মসূচি ও সরকারি অনুষ্ঠান এড়িয়ে যাচ্ছিলেন। তাঁর ও তাঁর অনুগামীদের দলহীন জনসংযোগ চলছিল। এই নিজের খাসতালুক নন্দীগ্রামে গিয়ে তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য শাসকদলে ভাঙনের আশঙ্কা তৈরি করেছে। হ্যাঁ, তিনি রাজ্যের দাপুটে মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। যাঁকে নিয়ে এই মুহূর্তে রাজ্য–রাজনীতিতে গুঞ্জনের শেষ নেই।
শনিবার নন্দীগ্রামে শুভেন্দু তৃণমূলের নামোচ্চারণ পর্যন্ত করেননি। উল্টে বলেছেন, ‘প্যারাশুটেও নামিনি, লিফটেও উঠিনি। সিঁড়ি ভাঙতে ভাঙতে উঠেছি।’
এই মন্তব্য যে সরাসরি তৃণমূলেরই একাংশ নেতৃত্বের উদ্দেশ্যে করেছেন শুভেন্দু তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি রাজনৈতিক মহলের। এই আবহেই তৃণমূলে ফাটলের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এদিকে তৃণমূলের এক ডজন জেলার নেতা, যাঁরা শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ তাঁরাও বুঝতে পারছেন না কী করবেন। কারণ, তাঁদের কাছেও কোনও নিশ্চিত খবর নেই।
এই পরিস্থিতিতে নন্দীগ্রামের ওই বিজয়া সম্মিলনীতে তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল, পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি আবু তাহের ও প্রাক্তন সভাপতি বনশ্রী খাঁড়া–সহ শুভেন্দু অনুগামী নেতা–নেত্রীরা উপস্থিত থাকবেন বলে খবর। আর জেলায় তাঁর বিরোধী শিবিরের নেতা হিসেবে পরিচিত জেলা পরিষদের সহ–সভাপতি শেখ সুফিয়ান, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ স্বদেশ দাস থাকছেন না।
সুফিয়ান বলেন, ‘অরাজনৈতিকভাবে আয়োজন করা বিজয়া সম্মিলনীতে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তাই শুভেন্দুবাবুর অনুষ্ঠানে যাওয়ার প্রশ্নই নেই।আমরা তৃণমূল কংগ্রেস করি। আমরা দিদির অনুগামী। কেউ কেউ ‘দাদার অনুগামী’ নামে কর্মসূচি করছেন।’
দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বাংলা সফর শেষ করে দিল্লি চলে যাওয়ার পর জমিরক্ষা আন্দোলনের ‘শহিদ দিবস’ স্মরণে আগামী ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামের গোকুলনগর হাইস্কুল মাঠে জনসভার ঘোষণা করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। সুতরাং রাজ্য–রাজনীতিতে এই সভা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে এই সমাবেশ ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারেই হবে। এই তৃণমূলের জেলা কো–অর্ডিনেটর অখিল গিরি বলেন, ‘রাজ্য সরকার ও দলের পদে থেকে উনি সরকারের সমালোচনা করছেন। কেন্দ্র সরকারের বিরুদ্ধে কোনও কথা বলছেন না। যা বলছেন তাতে দলের নেতা–কর্মীরা বিভ্রান্ত হচ্ছেন। উনি দল ভাঙার চেষ্টা করছেন। ক্ষমতা থাকে তো দলের ও সরকারের পদ ছেড়ে কথা বলুন।’