বিয়ের ভুয়ো কার্ড দেখিয়ে রূপশ্রী প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠল বীরভূমের নলহাটি ২ নম্বর ব্লকে। এই ঘটনার তদন্তে গিয়ে চক্ষু চড়কগাছ ব্লক অফিসের আধিকারিকদের। কারণ কারও চার বছর আগে বিয়ে হয়েছে, আবার কেউ ছেলেমেয়ে নিয়ে সংসার করছেন! এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের বিডিও রূপশ্রী প্রকল্পের আট ভুয়ো প্রাপকের নামে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে রাজ্যের দরিদ্র পরিবারের কন্যাদের বিয়ের সময় আর্থিক সাহায্য দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। যার নাম হল রূপশ্রী প্রকল্প। আর এই প্রকল্প থেকেই এবার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠল আট বিবাহিত মহিলার বিরুদ্ধে।
ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূমের নলহাটি ব্লকে। সূত্রের খবর, অভিযুক্ত ওই আট মহিলার বাড়ি ওই ব্লকের নওয়াপাড়া এবং তিলোরায়। ইতিমধ্যেই এই আটজনের বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন।
এদিকে ব্লক প্রশাসনের দাবি, পঞ্চায়েত প্রধানের সার্টিফিকেটের ভিত্তিতেই সরকারি প্রকল্পের টাকা তাদের দেওয়া হয়েছে। আর তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, আধিকারিকরা তদন্ত করে টাকা ছাড়ে। তাঁরাই যোগসাজশ করেছে। এই বিষয়ে নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সেলিমা খাতুন বলেন, ‘আধিকারিকদের তদন্তের পরেই টাকা ছাড়া হয়। যদি গাফিলতি থাকে তাহলে সেটা তাঁদের। ওই প্রকল্পে টাকার জন্য সভাপতি সই করে না। আর যদি পঞ্চায়েত প্রধান সই করে থাকেন তিনিও দায় এড়াতে পারেন না।’
অভিযুক্ত আটজনের মধ্যে ছয় জন— মমিনা খাতুন, রুবিনা খাতুন, সমাপ্তি দাস, হাসনিরা খাতুন, লুসিনা খাতুন, মূরশেদা খাতুনের বাড়ি নলহাটি ব্লকের নওয়াপাড়ায়। বাকি দু’জন অর্থাৎ গৌরী মাল এবং আশা মালের তিলোরা গ্রামে। এদের মধ্যে দীর্ঘদিন আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে মমিনা খাতুন, রুবিনা খাতুন, লুসিনা খাতুন এবং মূরশেদা খাতুনের। মমিনা খাতুনের আবার সন্তানও রয়েছে। বাকিদেরও টাকা তোলার আগেই বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
ঠিক কী ঘটেছে? নলহাটি দুই ব্লকের নওয়াপাড়া এলাকার আট প্রাপক রূপশ্রী প্রকল্পের ২৫ হাজার টাকা সরকারি অনুদান দাবি করেছিল। সদস্য ও প্রধানের সার্টিফিকেট, বিয়ের কার্ড এবং এলাকার তদন্তের ভিত্তিতে তাঁদের সে টাকা দেওয়া হয়। কিন্তু গত সপ্তাহে জেলাশাসকের দফতরে ওই প্রাপকরা ভুয়ো বিয়ের কার্ড দেখিয়ে টাকা তুলেছে বলে অভিযোগ আসে। তখনই জেলা থেকে বিডিওকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। তদন্তের জন্য ব্লকের ছয় সদস্যের একটি দল গঠন করা হয়। তদন্তকারী দল নওয়াপাড়া গিয়ে জানতে পারেন, সবাই ভুয়ো পরিচয় দিয়ে নকল কার্ড বিডিও দফতরে পেশ করেছিল।
এই আটজন অভিযুক্ত মহিলা নিজেদের ভুয়ো বিয়ের কার্ড ছাপিয়ে এবং অন্যান্য ভুয়ো কাগজপত্র দেখিয়ে রূপশ্রী প্রকল্পের সেই ২৫০০০ টাকা করে হাতিয়ে নেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকার বিডিও হুমায়ুন চৌধুরী তদন্তে নামলে হাতেনাতে ধরা পড়ে যান ওই আট মহিলা। এখনও পর্যন্ত তদন্তে উঠে আসা এই আটজনের হাতিয়ে নেওয়া টাকার পরিমাণ দু’লক্ষ টাকা। তবে সম্প্রতি এই আটজনের ঘটনা সামনে এসেছে। আর এরপরে প্রশ্ন উঠছে, এমন ঘটনা আর কোথাও নেই তো?