চোখের নিমেষে সব শেষ হয়ে যাবে সেটা কেউ ভাবেননি। কিন্তু হল তাই। চোখের সামনে গঙ্গায় তলিয়ে গেল একসঙ্গে ১০টি বাড়ি। মাথার ছাদ গঙ্গাবক্ষে তলিয়ে গেল। আর তা দেখেই উঠল কান্নার রোল। আজ, সোমবার মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের শিবনগরে গঙ্গা ভাঙন দেখা দেয়। তাতেই এমন ঘটনা ঘটায় তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। চোখের নিমেষে ১০টি বাড়ি, কৃষিজমি তলিয়ে গেল গঙ্গায়। আর তারপর থেকে দিশেহারা গ্রামবাসীরা। আরও প্রায় ৫০টি বাড়ি বিপদের মধ্যে রয়েছে বলে দাবি স্থানীয় বাসিন্দাদের।
প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই ১০টি তলিয়ে যাওয়া বাড়ির বাসিন্দাদের স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। গৃহহীনদের বসবাসের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করার বিষয়ে ভাবনা চিন্তা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলাম। স্থানীয় সূত্রে খবর, আজ সকালেই গঙ্গাভাঙনে পর পর বাড়ি তলিয়ে যায়। বাড়িগুলি থেকে বাসিন্দারা বেরিয়ে আসায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন। অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে কান্নায় ভেঙে পড়েন সকলেই। গত চার বছর ধরে সামশেরগঞ্জের নানা এলাকায় ভাঙন দেখা দিচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালির বস্তা ফেলে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। লাভ হয়নি।
আরও পড়ুন: হাওড়া–আমতা শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ, অফিস থেকে ফেরার সময় দুর্ভোগে যাত্রীরা
নদী ভাঙন নিয়ে বারবার সোচ্চার হয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই কেন্দ্রীয় সরকারের সাহায্য চেয়েছিলেন। এবারের নীতি আয়োগের বৈঠকেও সে কথা তুলে ধরেন মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভাতেও তা জানিয়েছেন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার বাজেটে কোনও বরাদ্দ করেনি বাংলার নদী ভাঙনের জন্য। এই বিষয়ে সামশেরগঞ্জের বিডিও সুজিতচন্দ্র লোধ বলেন, ‘যখন আমাদের কাছে এই গঙ্গা ভাঙনের খবর আসে তখন থেকে একটি টিম পাঠানো হয়েছে। যাঁরা গৃহহীন তাঁদের থাকার, খাবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সকলকে কম্বল দেওয়া হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ১০টি বাড়ি গঙ্গাবক্ষে তলিয়ে গিয়েছে।’
এছাড়া আরও ২৫টি বাড়ির বাসিন্দারা এই ঘটনা দেখে আতঙ্কে গৃহহীন হয়ে পড়েছেন। আজ গঙ্গা ভাঙনের খবর পেয়ে এলাকায় যান সামশেরগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রফিকুল আলম, চাচন্ড গ্রাম পঞ্চায়েত প্রতিনিধি গোলাপ হোসেন–সহ প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁদের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন গ্রামবাসীরা। আর সামশেরগঞ্জের বিধায়ক আমিরুল ইসলামের বক্তব্য, ‘দুর্গতদের একটি স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ব্লক প্রশাসন ও তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। গৃহহীনদের স্থায়ী বসবাস করার ব্যবস্থা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে।’ মুর্শিদাবাদের জেলা প্রশাসক রাজশ্রী মিত্রের কথায়, ‘স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে গোটা বিষয়টির উপর নজর রাখতে।’