ইডির তদন্তে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ যাঁদের ধরেছে তাঁরা কি সত্যিই জড়িত? নাকি কাউকে আড়াল করা হচ্ছে? কার ইন্ধনে ইডি ও কেন্দ্রীয় বাহিনীকে শাহজাহানের খাসতালুকে রুখে দেওয়া হয়েছে সেটা জানতে চান অফিসাররা। তদন্তকারীদের উপরে কোন দিক থেকে হামলা করা হয়েছিল সেটাও জানার জন্য বারবার সেখানে ছুটে গিয়েছেন অফিসাররা। রবিবার দুপুরে সন্দেশখালির শাহজাহান মার্কেট চত্ত্বরে দাঁড়িয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন সিবিআই অফিসাররা। শেখ শাহজাহান যদিও এখন সিবিআই হেফাজতে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ওই হামলার ঘটনায় সাতজন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছেন। তবে গ্রেফতার হওয়া সদস্যদের পরিবার আবার তাদের ঘরের লোককে অযথা ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে সরব হয়েছেন। সুতরাং এই বিষয়টি নিয়ে মামলায় কোনও ধোঁয়াশা রাখতে চায় না সিবিআই। তাই সরেজমিনে তদন্তে নেমে এখনও সন্দেশখালিতে ঘুরে সম্ভাব্য প্রত্যক্ষদর্শীদের খোঁজ করছে সিবিআই।
সন্দেশখালিতে আক্রান্ত ইডির দু’জন অফিসারকে একসপ্তাহ আগে শাহজাহানের আকুঞ্জি পাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। একাধিক হামলাকারীকে তখন চিহ্নিত করা হয়। পরে তাদের বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয় বলে খবর। তবে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যরা নানা সময়ে দাবি করেছেন, তাঁদের ঘরের লোক চক্রান্তের শিকার। শাহজাহান ঘনিষ্ঠ সরবেড়িয়া আগরহাটি পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূল কংগ্রেসের জিয়াউদ্দিন মোল্লা চক্রান্ত করে ধৃতদের ফাঁসিয়েছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তারা ইডি অফিসারদের উপরে হামলায় যুক্ত নয়। সিবিআই এখন তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করে দেখছে, পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা সত্যিই এই হামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন কিনা।
আরও পড়ুন: রঙের উৎসব দোলেও টক্কর দিদি–মোদীর, বাজারে দেদার বিকোচ্ছে দুই নেতা–নেত্রীর হোলির সরঞ্জাম
এরপর দুপুরেই সন্দেশখালির শাহজাহান মার্কেটের সামনে জড়ো হন সিবিআই অফিসাররা। কিছুদিন আগেও এলাকার অলিখিত ‘ডন’ শাহজাহানের নামে বাজারে গত ৫ জানুয়ারিও তদন্তের কাজে যায় ইডি। এদিন সেখানে স্থানীয় এক চা–বিক্রেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সিবিআই। পরে তাঁকে নিজাম প্যালেসেও নিয়ে যাওয়া হয়। সিবিআই সূত্রে খবর, ইডির তদন্তকারী দলের অফিসার ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপরে হামলায় শাহজাহান বাহিনীর যোগসাজশ যাচাই করতেই ওই চা–বিক্রেতার মতো সম্ভাব্য প্রত্যক্ষদর্শীদের ধরে ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করছে সিবিআই। রেশন বন্টন দুর্নীতির তদন্তের পাশাপাশি সন্দেশখালিতে তদন্তে বাধা দেওয়ার অপচেষ্টার অভিযোগটিও গুরুতর হিসাবেই তাঁরা দেখছেন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এদিন দুপুরে সিবিআইয়ের দুই ডিএসপি পদমর্যাদার অফিসার–সহ বেশ কয়েকজন সিবিআই অফিসার আসেন সন্দেশখালি। সঙ্গে ছিল কেন্দ্রীয় বাহিনী। ইডির উপর হামলার ঘটনায় পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া সুকমল সর্দার ও মেহেবুর মোল্লাকেও সন্দেশখালিতে নিয়ে যায় সিবিআই। তাঁরা এখন সিবিআইয়ের হেফাজতে আছেন। দুই অভিযুক্তকে নিয়ে সিবিআই প্রথমে ন্যাজাট থানার সরবেড়িয়া বাজারের কাছে ডুগরি পাড়ায় যান। শাহজাহান মার্কেটের কাছে সৈফুদ্দিন মোল্লার চায়ের দোকানে যায় সিবিআই। ওই চা দোকান বন্ধ করিয়ে সেখানে বসে জিজ্ঞাসাবাদ চলে কিছুক্ষণ। অফিসারদের বাধা দেওয়ার দিন সকালে সৈফুদ্দিন ঠিক কী দেখেন? তাতেই সিবিআই গুরুত্ব দিচ্ছে বলে সূত্রের খবর। কলকাতার নিজাম প্যালেসে নিয়ে গিয়ে সৈফুদ্দিনকে রাত পর্যন্ত জেরা করা হয়। শাহজাহান ও তাঁর ঘনিষ্ঠদের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় বলে সূত্রের খবর। রাজবাড়ি ফাঁড়িতেও কথা বলেছেন অফিসাররা।