তৃণমূল কংগ্রেস সরকার বাংলায় ক্ষমতায় রয়েছে ১৩ বছর। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। বামফ্রন্ট সরকারের আমলে একের পর এক অত্যাচারের ঘটনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমে বাংলার মসনদে আসে তৃণমূল কংগ্রেস। কিন্তু এই ১৩ বছরের সময়কালে নানা ঘটনা ঘটেছে। তা নিয়ে বিরোধীরা আন্দোলনও করেছে। কিন্তু সন্দেশখালির ঘটনা সত্যিই চাপের হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর তাই তৃণমূল কংগ্রেসের কাছে এই ঘটনা হয়ে উঠেছে দুশ্চিন্তার এবং উৎকণ্ঠার। ৫০টি দিন পেরিয়ে গিয়েছে। অশান্ত হয়ে রয়েছে সন্দেশখালি। আর বিরোধীরা এখান থেকে নিতে শুরু করেছে রাজনৈতিক অক্সিজেন। কারণ এখানে দলের নেতারা জড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ। কবে শান্ত হবে সন্দেশখালি? উঠছে প্রশ্ন।
এদিকে স্থানীয় মানুষজন সরাসরি পথে নেমে এসে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন। তা আবার সেখান থেকে সম্প্রচার করছে সংবাদমাধ্যমগুলি। এটা যত হচ্ছে তত স্নায়ুর চাপ বাড়ছে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারের। এখনও শেখ শাহজাহান অধরা। তার উপর জমি, ভেড়ি, টাকা থেকে নারী নির্যাতনের নানা অভিযোগ সামনে চলে আসছে। বিজেপি সেই সুযোগটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে। তবে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তৃণমূল কংগ্রেসের কিছু নেতা ঘনিষ্ঠমহলে বলেছেন, জেলবন্দি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের জন্যই শেখ শাহজাহানের এত বাড়বাড়ন্ত। শাহজাহান–বাবুদের প্রশ্রয় জ্যোতিপ্রিয়ই দিয়েছিল বলে অভিযোগ তাঁদের। কিন্তু দল কি শুধু জ্যোতিপ্রিয়র নির্দেশেই চলত? এই প্রশ্নও কেউ কেউ তুলছেন।
আরও পড়ুন: একাধিক বাংলার স্টেশন সংস্কার হতে চলেছে, বহু প্রকল্পের শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী
অন্যদিকে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের কাজের জায়গা ছিল উত্তর ২৪ পরগনার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। কংগ্রেস ছেড়ে ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস গঠনের সময়ই উত্তর ২৪ পরগনা জেলার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। তাই তাঁর উপরই অনেকটা দোষ চাপাচ্ছেন সিনিয়র নেতারা। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের জমানায় বীরভূমের বগটুই কিংবা ভাঙড়ের কাশীপুরে যে ঘটনা ঘটেছিল তা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছিল ঘাসফুল শিবির। কারণ সেখানে মৃতদেহ মিলেছিল। আর সন্দেশখালিতে কোনও দেহ মেলেনি। শুধুই আন্দোলনে তপ্ত হয়ে উঠেছে। এখান থেকে পরিস্থিতি শান্ত করে বেরিয়ে আসা যাচ্ছে না। কারণ সন্দেশখালিতে গণসংগঠনের যে ভূমিকা থাকা উচিত ছিল সেটা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ তৃণমূল কংগ্রেসের সিনিয়র নেতাদের। সন্দেশখালি থেকে যে রিপোর্ট রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পৌঁছত সেটায় জল মেশানো ছিল বলে এখন বোঝা যাচ্ছে।
এছাড়া সব অভিযোগ সত্যি কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে ঠিকই। কিন্তু যা রটে তার কিছু তো বটে বলে মনে করছেন অনেকে। শিবু হাজরা, উত্তম সর্দাররা গ্রেফতার হলেও শান্ত হয়নি সন্দেশখালি। তাহলে কি শেখ শাহজাহান গ্রেফতার হলে শান্ত হবে সন্দেশখালি? উঠছে প্রশ্ন। এখানে মার্চ মাসে সভা রয়েছে তৃণমূল কংগ্রেসের। তারপর সেখানে আসার কথা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ইতিমধ্যেই রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমার গোটা এলাকা চষে ফেলে একটা রূপরেখা তৈরি করেছেন বলে সূত্রের খবর। তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যাওয়ার পর পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারেন শেখ শাহজাহানকে গ্রেফতার করার। তারপরই শান্ত হতে পারে উত্তপ্ত সন্দেশখালি। ইতিমধ্যেই যাঁদের জমি নেওয়া হয়েছিল তাঁদের তা ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাট্টা জমি রেকর্ড করার কাজ চলছে। এখন দেখার এটার শেষ কোথায়।