ভারত – নেপাল সীমান্ত লাগোয়া দার্জিলিংয়ের নকশালবাড়িতে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষের বাড়ি থেকে তেজস্ক্রিয় ধাতু উদ্ধারের ঘটনায় চাঞ্চল্যকর মোড়। পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া ধাতু নকল হতে পারে। এমনকী ওই তৃণমূল নেতার বাড়ি থেকে প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থার যে সব নথি উদ্ধার হয়েছে সম্ভবত তা-ও জাল।
মঙ্গলবার রাতে নকশালবাড়ির বেলগাছি চা বাগানে তল্লাশি চালায় সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ। NDRFএর সহযোগিতায় সেখান থেকে ফ্রান্সিস এক্কা নামে এক তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতের স্ত্রী পঞ্চায়েত সমিতির অচিরাচরিত শক্তি বিভাগের কর্মাধ্যক্ষ। বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় DRDOর একাধিক নথি। এর পর ধৃতকে পুলিশের হাতে তুলে দেন সেনাবাহিনীর আধিকারিকরা। ওদিকে উদ্ধার হওয়া তেজস্ক্রিয় ক্যালিফোর্নিয়াম পাঠানো হয় গবেষণাগারে।
ধৃতকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর দার্জিলিংয় জেলা পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া ধাতু নকল হতে পারে। আর আসল হলেও তার মধ্যে কতখানি তেজস্ক্রিয়তা অবশিষ্ট রয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। জেরায় ধৃত জানিয়েছে, কয়লাখনির সঙ্গে যুক্ত এক ব্যক্তির কাছ থেকে এই ধাতু পেয়েছেন তিনি। বলে রাখি, পৃথিবীর সব থেকে মূল্যবান পদার্থগুলির মধ্যে একটি হল ক্যালিফোর্নিয়াম। এক গ্রাম ধাতুর আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য ১৭ কোটি থেকে ১৯ কোটি টাকা। পারমাণবিক গবেষণায় এই ধাতু ব্যবহার করা হয়। তবে এই ধাতু সাধারণ মানুষের কাছে থাকা তো পরের কথা দেখাও নিষিদ্ধ। অত্যন্ত তেজস্ক্রিয় এই ধাতু থেকে বিকিরিত রস্মি কারও দেহে প্রবেশ করলে ক্যান্সারে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
জানা গিয়েছে, ২০১৫ সালে DRDO থেকে ক্যালিফোর্নিয়াম চুরি গিয়েছিল। সেই ক্যালিফোর্নিয়ামই উদ্ধার হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করা হয়েছিল। কিন্তু পরমাণু বিজ্ঞানীরা বলছেন, যদি সত্যিই তা হয়ে থাকে তাহলে তাতে কতটা তেজস্ক্রিয়তা অবশিষ্ট রয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ তেজস্ক্রিয় ধাতু পারমাণবিক কণা বিকিরণের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত নিম্নতর পরমাণু ক্রমাঙ্কযুক্ত অন্য ধাতুতে রূপান্তরিত হয়। এভাবে ক্রমাগত বিকিরণের মাধ্যমে শেষে তা শিসায় পরিণত হয়। ক্যালিফোর্নিয়ামের সব থেকে জনপ্রিয় রূপ ক্যালিফোর্নিয়াম ২৫২-র তেজস্ক্রিয়তার মেয়াদ ২.৬ বছর। তার পর তার মধ্যে নামমাত্র তেজস্ক্রিয়তা অবশিষ্ট থাকে।
পুলিশের দাবি, উদ্ধার হওয়া ক্যালিফোর্নিয়াম হয় নকল, অথবা মেয়াদ উত্তীর্ণ। ফলে ধৃত তৃণমূল নেতা কোনও প্রতারণার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। ওদিকে সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃত তৃণমূল নেতা কোনও আন্তর্জাতিক চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করছেন তাঁরা।