দশ বছরের বেশি সময় ধরে চলা খুনের চেষ্টার মামলার নিষ্পত্তি করল আলিপুরদুয়ার আদালত। খুনের চেষ্টায় দোষী সাব্যস্ত দুই ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের ফাস্টট্র্যাক কোর্ট।
শুক্রবার দুই প্রত্যক্ষদর্শী-সহ ১৪ জনের বয়ানের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেছিল আদালত। শনিবার দুপুরে দোষী সাব্যস্ত দুই ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এদিন এই সাজা ঘোষণা করেন অতিরিক্ত জেলা দায়রা আদালতের ফাস্টট্র্যাক কোর্টের বিচারক সুপর্ণা ভট্টাচার্য।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৪১, ৩২৬ ও ৩০৭ ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিনের আদালতের এই রায়ে সুজিতের পরিবার স্বস্তি পেলেও, এই রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে যাবে বলে জানিয়েছে দোষীদের পরিবার।
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১১ সালের ডিসেম্বরে এই খুনের চেষ্টার ঘটনাটি ঘটে আলিপুরদুয়ারের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের মান্না দে স্ট্রিটে। আলিপুরদুয়ার থানা মোড়ের বাসিন্দা দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগ উঠে। হকি দাস ও রকি দাস নামের দুই ভাই ঘটনার সময় বাইকে চেপে মান্না দে স্ট্রিটের বাসিন্দা সুজিত সেনগুপ্তের বাড়িতে যায়। দুই ভাই সুজিতকে বাড়ির বাইরে ডেকে নিয়ে আসে। সুজিত ঘরের বাইরে বের হলে, আচমকা তাঁকে ধারালো তলোয়ার দিয়ে এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে দুই ভাই। তলোয়ারের আঘাত থেকে বাঁচতে হাত দিয়ে শরীর ঢাকতে যায় সুজিত। তখনই তলোয়ারের কোপে তাঁর ডান হাত কেটে টুকরো হয়ে পাশের নর্দমায় গিয়ে পড়ে। রক্তাক্ত অবস্থায় যন্ত্রণায় ছটফট করতে থাকেন সুজিত। তাঁর চিৎকারে বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা ছুটে আসেন।
পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে ঘটনাস্থল ছেড়ে চম্পট দেয় দুই ভাই। বাইকে চেপে সেখান থেকে পালিয়ে যায় তারা। খবর দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় আলিপুরদুয়ার থানার পুলিশ। গুরুতর আহত অবস্থায় সুজিতকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভরতি করানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শরীরের বিভিন্ন অংশে শতাধিক সেলাই পড়ে সুজিতের। যদিও কাটা হাত পরে আর জোড়া লোগেনি। ঘটনায় হাত খোয়াতে হয় ওই যুবককে।
ঘটনার পরদিনই সুজিতের স্ত্রী আলিপুরদুয়ার থানায় গিয়ে দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। তারপর থেকে মামলা শুরু হয় আলিপুরদুয়ার আদালতে। তদন্তে নেমে হায়দরাবাদ থেকে হকিকে এবং উত্তরাখণ্ডের মুসৌরি থেকে রকিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার পর থেকে টানা ১০ বছর ধরে এই মামলার শুনানি চলে আদালতে। ওদিকে হাত হারিয়ে কর্মহীন হয়ে পড়ে সুজিত। গত দেড় বছর আগে মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী হয় সে। যদিও তাঁর স্ত্রী মামলা লড়তে থাকেন আদালতে। অবশেষে দোষী দুই ভাইকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় আদালত।