দুয়ারে সরকার কর্মসূচির শুরুতেই প্রশাসন জানিয়েছিল, সরকারি পরিষেবার ঘোষণা এবং তা হাতে পাওয়ার মধ্যে ব্যবধান ঘোচানোই মূল লক্ষ্য। সম্প্রতি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের ‘অবিশ্বাস’ কাটিয়ে তাঁদের পরিষেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা হয়েছে। এবার যৌনকর্মীদের ক্ষেত্রেও একই কাজ করতে হল জেলা আধিকারিকদের। গত সপ্তাহেই ভবানীপুরে ‘দুয়ারে সরকার’–এর শিবিরে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যৌনকর্মী এবং রূপান্তরকামীদের জন্য বিশেষ ক্যাম্পের ব্যবস্থা করে দিতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেইমতো উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্যের শিশু ও নারীকল্যাণ দফতর। সহযোগিতা করছে কলকাতা পুরসভা।
দুয়ারে সরকারের শিবিরগুলিতে হাজিরা না থাকায় যৌনপল্লিতে কথা বলতে গিয়েছিলেন বীরভূম জেলা প্রশাসনের কর্তারা। সিউড়িতে জেলার অন্যতম বড় যৌনপল্লিতে যৌনকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে সংশ্লিষ্টরা জানতে পারেন, আগে অনেক প্রতিশ্রুতি পেলেও সবাই পরিষেবার আওতায় আসতে পারেননি। তাই সরকারি কর্মসূচিকে তাঁরা তেমন গুরুত্বই দেননি! তাঁরা জানান, ১৩৫টি পরিবারের মধ্যে মাত্র দু’টি পরিবার স্বাস্থ্যসাথীর আওতায় রয়েছে। খাদ্যসাথী রয়েছে ৫৭ জনের। জাতি শংসাপত্রের চাহিদাও রয়েছে অনেকের। গত ৮ ডিসেম্বর উত্তর কলকাতার নীলমণি মিত্র রো এবং কালীঘাটে মহিলাদের জন্য শিবির করা হয়েছে। সেখানে যৌনকর্মীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি’-র অফিসে খোলা হয়েছিল শিবির। একদিনে প্রায় ১,৫০০ নাম নথিভুক্ত হয়। গত ১০ ডিসেম্বর রূপান্তরকামীদের জন্য বিশেষ ক্যাম্প করা হয়েছিল। শহরের দু’টি জায়গায় শিবির হয়েছিল। সবমিলিয়ে স্বাস্থ্যসাথীতে ৫৯ জন এবং খাদ্যসাথীতে মাত্র ১৮ জন রূপান্তরকামী নাম নথিভুক্ত করেছেন।
এক কর্তার কথায়, সামাজিক সমস্যাই অনেকটা ব্যবধান তৈরি করে। এখন পরিষেবা নিয়ে প্রত্যেকে আশ্বস্ত হয়েছেন। স্বাস্থ্যসাথী এবং খাদ্যসাথীর সুবিধা সবাইকে দেওয়া হবে। সবটা খতিয়ে দেখে জাতি শংসাপত্রের বিষযে পদক্ষেপ করবে প্রশাসন। রাজ্যের শিশু, নারী ও সমাজকল্যাণ দফতর বিষয়টি দেখভাল করছে। মন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা জানান, ইতিমধ্যেই যৌনকর্মী এবং রূপান্তরকামীদের জন্য ক্যাম্প করা হয়েছে। আগামিদিনে যেখান থেকে প্রস্তাব আসবে, সেখানেই শিবিরের ব্যবস্থা করা হবে।
আলোচনার মধ্যেই ভোটার কার্ড না থাকার সমস্যার কথাও তুলে ধরেন যৌনকর্মীরা। সমাজকর্মী বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি জানাচ্ছেন, পাচারের সঙ্গে এই সমস্যার একটা গভীর যোগাযোগ রয়েছে। কারণ, অল্প বয়সে পাচার হওয়া মেয়েরা যৌনপল্লিতে চলে গেলে তাঁদের পারিবারিক পরিচয় বা ঠিকানার প্রমাণ থাকে না। তাই ভোটার কার্ড পেতে সমস্যা হয়। জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানাচ্ছেন, রাজ্যে এখন ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ চলছে। ভোটার কার্ড নিয়ে সংশ্লিষ্টদের দাবি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে। সরকারি উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন কৃষ্ণনগর উইমেন্স কলেজের প্রিন্সিপাল মানবী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘উদ্যোগ প্রশংসার যোগ্য। প্রকৃত উপকার পেলেই আসল সাফল্য আসবে।’