মাঝেমধ্যেই ফোঁস করছিলেন বনগাঁর বিজেপি সাংসদ শান্তনু ঠাকুর। এবার সেই শান্তনুর সঙ্গে কলকাতায় বৈঠক করলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেই বৈঠকে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) নিয়ে শান্তনুর মতামত জানতে চাওয়া হয় বলে সূত্রের খবর।
বিজেপির অন্দরের খবর, শান্তনুর ‘বেসুরো’ মন্তব্য নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। তাতে শান্তনু নাকি দাবি করেছেন, তাঁর মন্তব্য বিকৃত করা হচ্ছে। একইসঙ্গে শান্তনুকে জানানো হয় যে ইতিমধ্যে সিএএ নিয়ে মুখ খুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তাই দলের অন্দরে বিপক্ষে মুখ খোলার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। সেই ব্যাখ্যায় শান্তনু সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে সূত্রের খবর।
পরে বৈঠক থেকে বেরিয়ে দিলীপ দাবি করেন, শান্তনুর সঙ্গে দলের কোনও সমস্যা নেই। তিনি বলেন, ‘(শান্তনু) পরিষ্কার বলেছেন, বিজেপি যখন আইন করেছে, তখন বিজেপিই সেটার প্রণয়ন করবে। বিজেপি ছাড়া কারও (প্রণয়ন) করা সম্ভব নয়। যাঁরা আমার সম্বন্ধে বলছেন, তাঁরা সিএএকে সমর্থনই করেন না। তো তাঁদের সঙ্গে আমার কী সম্পর্ক? কোনও মতবিরোধ নেই। এটা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে, কেন হচ্ছে না।’
গত ২০ ডিসেম্বর বোলপুরে শাহ জানিয়েছিলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের নিয়ম এখনও তৈরি হয়নি। করোনার কারণে এত বড় কর্মসূচি পিছিয়ে গিয়েছে। করোনার টিকাকরণ শুরু হলে সে বিষয়ে ভাবনাচিন্তা করা হবে। সেই মন্তব্যের পর থেকেই একাধিক ফোঁস করেছেন শান্তনু। ইদানিং বিজেপির একাধিক কর্মসূচিতে তাঁর দেখা পাওয়া যাচ্ছিল না। জল্পনা আরও বাড়িয়ে খোদ শান্তুনু জানিয়েছিলেন, মানুষের স্বার্থের জন্য অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সিদ্ধান্তে রাজনীতিতে এসেছেন। কিন্তু সেই স্বার্থ যদি বিঘ্নিত হয়, তাহলে আগামিদিনে ‘অনেক কিছু’ করতে পারেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। সঙ্গে যোগ করেছিলেন, ‘(সিএএ) কার্যকর না হলে আমার সংঘ যা সিদ্ধান্ত নেবে, আগামিদিনে আমি সেখানেই থাকব।’ সুযোগ পেয়ে আসরে নামে তৃণমূল কংগ্রেস। শান্তনুকে তৃণমূলের তরফে বার্তা দেওয়া হয়। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তো কার্যত সরাসরি শান্তনুকে ঘাসফুল শিবিরে আহ্বান জানান।
তবে দিলীপের সঙ্গে বৈঠকের আগেই তৃণমূলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা কার্যত উড়িয়ে দেন শান্তনু। সোমবার চুঁচুড়ার সকান্তনগর মাঠে মতুয়া মহাসংঘের জনসভায় শান্তনু বলেন, ‘নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন যাতে আমাদের পক্ষে যায়, সেজন্য আমাদের আন্দোলন। যাঁরা এটার সমর্থন করছেন না, সেখানে আমার যাওয়ার প্রশ্ন আসছে কীভাবে? তাঁরা বলে দিন, সিএএ সমর্থন করছেন। তারপর আমরা দেখছি, কী করা যায়।’
একই কথা বলেন দিলীপ। তাঁর কথায়, ‘যেহেতু শান্তনু ঠাকুর একটা সমাজের প্রতিনিধি। তাঁরা এটার দ্বারা উপকৃত হবেন। তাঁরা বিশ্বাস করছেন যে বিজেপি এটা করবে। তাই স্বাভাবিকভাবে তাঁরা জিজ্ঞাসা করছেন, কবে হবে। তিনি নেতা। আর জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক যদি আহ্বান করেন, শান্তনু ঠাকুর (মতুয়া মহাসংঘরে) সভাধিপতি। উনি সব জায়গায় যেতে পারেন। তাঁর আশীর্বাদ নিয়ে যদি পাপস্খলন করতে চান, তা করুন। আমার আপত্তি নেই।’