অনেক স্বপ্ন নিয়েই জাহাজের ক্রু মেম্বারের চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন বাংলার ছেলে রাহুল রায়। জলরাশির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য তাঁকে মুগ্ধ করত। বারাসতের হৃদয়পুরের ছেলে রাহুল এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় পাড়ি দিতেন জাহাজের মাধ্যমে। নানা রঙের জল দেখতে পেতেন। তার সঙ্গে বিস্তীর্ণ জলের ওপারে কী আছে তা জানতে কৌতূহলীও ছিলেন। এই জলের উপর দিয়েই যাতায়াতের মধ্যে নিজের কাজে আনন্দ খুঁজে পেতেন রাহুল। কিন্তু এখন প্রায় চারদিন কেটে গিয়েছে। এখনও নিখোঁজ খিদিরপুর থেকে আন্দামানের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া জাহাজের ক্রু মেম্বার রাহুল রায়। জাহাজডুবি হয়েছে। তাই নিখোঁজ রাহুল। উৎকণ্ঠায় রাহুল রায়ের পরিবার। ১৫ বছরের পুরনো জাহাজ। সেটা কেন জলে নামানো হলো? প্রশ্ন সকলের।
যে বিশাল জলের সৌন্দর্যকে ভালবাসতেন রাহুল সেই জলেই খোঁজ চলে রাহুলের। এই যুবকের বিয়ের আর পাঁচ মাস বাকি রয়েছে। তাই ছেলে রাহুলের কোনও খবর না পেয়ে চরম উদ্বেগের মধ্যে প্রহর কাটছে বারাসাতে হৃদয়পুরের শান্তিনগর এলাকার রায় পরিবারের। খিদিরপুর ডক থেকে আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ার যাচ্ছিল জাহাজটি। আর সেই যাত্রা পথে বঙ্গোপসাগরে পণ্যবাহী জাহাজ ডুবে যায় বলে খবর। এই জাহাজডুবির খবর ২৬ অগস্ট সন্ধ্যায় আসে জাহাজের কেবিন ক্রু মেম্বার রাহুল রায়ের বাবা সুবোধ কুমার রায়ের কাছে। তখন থেকেই সব এলোমেলো হয়ে গিয়েছে তাঁর।
আরও পড়ুন: প্রতিবাদের সভা থেকেই কংগ্রেস কর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার অধীরের, মেজাজ হারালেন নেতা
এই জাহাজটি পুরনো ছিল বলে অভিযোগ সুবোধবাবুর। তাহলে কেন নামানো হল? কেন এমন জাহাজকে ফিট সার্টিফিকেট দেওয়া হয়? এই সব প্রশ্ন তুলছেন রায় পরিবারের সদস্যরা। কলকাতার এক বেসরকারি জাহাজ কোম্পানি আইটিটির জাহাজ ১৫ বছরের পুরনো বলে জানতে পেরেছে তাঁরা। সুবোধবাবুর দাবি, জাহাজের ১১ জন কর্মীকে উদ্ধার করা গেলেও এখনও রাহুল রায় ও ক্যাপ্টেন–সহ তিনজন নিখোঁজ আছে। তাঁদের উদ্ধার করতে কোস্টগার্ড এবং ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্সের হেলিকপ্টার তল্লাশি চালাচ্ছে। গতকালই পুণে থেকে দাদার নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে বারাসাতে হৃদয়পুরের বাড়িতে ছুটে আসেন রাহুলের ছোট ভাই রোহন রায়।
ছেলের খোঁজ না পেয়ে রাহুলের বাবা সুবোধবাবু জানান, কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রশাসনের দেখা উচিত যে জাহাজগুলি সমুদ্রে যাচ্ছে, সেগুলির ফিট সার্টিফিকেট সঠিক কিনা। রাহুল রায় যে জাহাজে ছিলেন সেটি ২৬ তারিখ বিকেল ৪টে নাগাদ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। কলকাতা থেকে ৯০ নটিকাল মাইল দূরে জাহাজডুবি হয়। ওখান থেকে ১১ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি তিনজন এখনও নিখোঁজ। এখন পাড়া–প্রতিবেশীরা হাজির হয়েছেন রাহুলের বাড়িতে। এই ঘটনার পর সবাই নানা তথ্য হাতড়াচ্ছেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাহুল রায়ের বিয়ে হওয়ার কথা। এখন সকলেই রাহুলকে ফিরে পাওয়ার প্রার্থনা করছেন।