শেষে বিয়েতে কিনা ইমিটেশনের গয়না! সোনার গয়না নেই কেন? এটা কীরকম হল?
এমনই হাজারো প্রশ্ন ধেয়ে এসেছিল শ্যামনগরের জুহি সাঁতরার দিকে। একঝাঁক প্রশ্নের মুখে অবশ্য হা-হুতাশ করেননি। বরং সিদ্ধান্তে অবিচল থেকে ফেসবুকে নিজের কাহিনি তুলে ধরেন। যা সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। জুহিকে কুর্নিশ জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
গত ২১ নভেম্বর সাতপাকে বাঁধা পড়েছেন ২৫ বছরের জুহি। শনিবার ফেসবুকে নিজের ছবি পোস্ট করে লেখেন, 'ভারতীয় বিয়ে মানে প্রচুর সোনার গয়না। একমাত্র মেয়ের বিয়েতে বাবা, মায়ের ইচ্ছাপূরণে আমি পুরো ইমিটেশন গয়না পরেছিলাম। বিয়েতে কোনও সোনা পরিনি। নিজের টাকায় পুরোটা কিনেছি। আর্থিকভাবে যতটা সম্ভব, বাবা-মা'কে সাহায্য করেছি। বরমালা থেকে শুরু করে গয়না, জুতো থেকে হাতব্যাগ, মুকুট থেকে শাড়ি, মেকআপ আর্টিস্ট থেকে ফোটাগ্রাফার - সাধ্যমতো করেছি। প্রায় অর্ধেক মানুষই আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছিলেন, কেন আমি ইমিটেশনের গয়না পরেছি? সোনার গয়না পরিনি কেন? প্রথমত, বাবা-মা এমনভাবে মানুষ করেছে যে জীবনে আমি নিজের সিদ্ধান্ত নিতে পারি এবং নিজে চাইলে নিজের গয়না কিনতে পারি। এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে গয়নার জন্য অনেক টাকা খরচ করার কোনও কারণ খুঁজে পাইনি। তাই সোনা না কেনার সিদ্ধান্ত একান্তই আমার। তাছাড়া বাবা, মায়ের উপর বিয়ের জন্য কোনওরকমভাবে চাপ তৈরির কোনও কারণ খুঁজে পাইনি আমি। ওরা অনেক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গিয়েছে। যে কোনও মূল্যে আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ওদের রক্ষা করব। ধন্যবাদ। ভালোবাসা নিও মা ও বাবা।'
সোশ্যাল মিডিয়ায় জুহির সেই পোস্ট ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ২৭ ঘণ্টার মধ্যে সেই পোস্টে রিঅ্যাকশন ১৬,০০০ ছাড়িয়েছে। শেয়ারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯,৬০০। জুহি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে মুগ্ধ হয়েছেন নেটিজেনরা। জানিয়েছেন কুর্নিশ। অনেকেই বলেছেন, 'আরও বেশি মেয়েদের মানসিকতা তোমার মতো হওয়া উচিত।' একজন আবার লেখেন, ‘তোমার মতোই যদি আমি করতে পারতাম!’
তারইমধ্যে সোনা যে পরবেন না, শুধু ইমিটেশনের গয়না পরবেন, সেই সিদ্ধান্ত কবে নিয়েছিলেন, তা ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা’-কে জানিয়েছেন জুহি জানান। একটি ভ্রমণ সংস্থার মালিক এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর জুহি বলেন, ‘অনেক আগেই ঠিক করেছিলাম যে আমার বিয়ের জন্য বাবা, মা'কে সোনার একটাও গয়না কিনতে দেব না।’ শুধু সেটাই নয়, বিয়েতে আমন্ত্রিতদের সংখ্যাও কম রাখার পক্ষপাতী ছিলেন জুহি। তিনি জানান, মাত্র ৮০ জনকে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল। সঙ্গে বরযাত্রী ছিলেন ৪০ জন।
সেইসবের মধ্যে অবশ্য বাবার স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ধরা পড়েছে জুহির গলায়। চলতি বছর জুলাইয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিল ষাটোর্ধ্ব বাবা। ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজের (সিওপিডি) সমস্যা আছে তাঁর। কিডনির সমস্যাও আছে। নিয়মিত ওষুধ খেতে হয় তাঁকে। কখনও কখনও শরীরটা বেশি খারাপ হয়। তাই আপাতত জুহির একটাই প্রার্থনা, বাবা যেন সুস্থ হয়ে ওঠেন।