একবছর পর মাটিগাড়ায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ–খুনের মামলার নিষ্পত্তি হল। আজ শনিবার দোষীকে ফাঁসির সাজা শোনালেন শিলিগুড়ি মহকুমা আদালতের বিচারক। এই ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত মহম্মদ আব্বাসকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হল। আরজি কর হাসপাতালের ঘটনার আবহে এই শাস্তি ঘোষণা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। দার্জিলিংয়ের মাটিগাড়ায় স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনা ঘটেছিল। তার জেরেই এই শাস্তি ঘোষণা করলেন শিলিগুড়ি আদালতের অতিরিক্ত নগর দায়রা আদালতের বিচারক অনিতা মেহেত্রা মাথুর।
তারিখটা ছিল—২০২৩ সালের ২১ অগস্ট। সেদিন মাটিগাড়ায় জঙ্গলের ভিতর একটি পরিত্যক্ত ঘরে একাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ফুঁসলিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর সেখানে নিয়ে গিয়ে লাগাতার ধর্ষণ করেছিল মহম্মদ আব্বাস নামের ব্যক্তি। বারবার শারীরিক অত্যাচারের জেরে মৃত্যু হয় ওই নাবালিকা ছাত্রীর। নির্যাতিতাকে যাতে কেউ চিনতে না পারে তার জন্য ইট দিয়ে থেঁতলে দেওয়া হয়েছিল নাবালিকা ছাত্রীর মুখ। ওই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে আলোড়ন পড়ে গিয়েছিল। অবশেষে আজ একবছর পর সমস্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ খতিয়ে দেখে মহম্মদ আব্বাসকে দোষী সাব্যস্ত করল আদালত। আর একইসঙ্গে ফাঁসির সাজা শোনাল।
আরও পড়ুন: বয়কট ট্রেন্ডে হাঁটল না তিন ক্লাব, দুর্গাপুজোর সরকারি অনুদান নিচ্ছে, এক্স হ্যান্ডেলে কুণাল
অপরাধী মহম্মদ আব্বাসের আইনজীবী জানান, তাঁর মক্কেলের বাড়িতে বৃদ্ধা মা আছেন। তাঁর পরিবারের কথা ভেবে ফাঁসির সাজা রদ করে দেওয়া হোক। আর সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ আমি দেশের একাধিক ঘটনার ক্ষেত্রে যেসব মামলায় ফাঁসির সাজা হয়েছিল, সেসব বিরল ঘটনার উদাহরণ দিয়ে অভিযুক্তের ফাঁসির সাজার দাবি করেছিলাম। সেই তথ্যের বিপক্ষে আসামী পক্ষের পক্ষ থেকে তাদের যুক্তি খাঁড়া করা হয়েছে। দু’পক্ষের কথা শুনে বিচারক জানান, তিনি শনিবার সাজা ঘোষণা করবেন। আদালত মূলত দুটি বিষয়ের উপর পর্যবেক্ষণ করে মৃত্যুদণ্ড দিল। এক, খুন এবং দুই, নাবালিকাকে ধর্ষণ। পক্সো আইনে মামলা হয়েছিল। আজ মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি মৃতার পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।’
কদিন আগেই রাজ্য বিধানসভায় পাশ হয়েছে ধর্ষণবিরোধী বিল। নয়া ‘অপরাজিতা’ বিলে ধর্ষণ–খুনে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের কথা উল্লেখ করা রয়েছে। এই বিলটি আইনে পরিণত করতে এখন প্রয়োজন রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর। রাজভবন থেকে অপরাজিতা বিল রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হয়েছে। তার মধ্যেই মাটিগাড়া মামলায় মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিল নিম্ন আদালত। সাজা ঘোষণার পরে নির্যাতিতার মায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘আদালতের রায়ে আমরা খুশি। আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। ওর ফাঁসিই হওয়াই উচিত। আদালতের উপর আমার ভরসা ছিল।’