চা–বাগানের সহকারি ম্যানেজার খুন। আর এই খুন পরিকল্পনা করেই করা হয়েছে বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয়েছে চা–বাগানেরই এক শ্রমিককে। গতকাল দুপুরে এই ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে ফাঁসিদেওয়া ব্লকের জয়ন্তিকা চা– বাগানের বাঁশ লাইন ডিভিশনে। পুলিশ সূত্রে খবর, ধৃতের নাম এলথ্রুস এক্কা। এই খুনের ঘটনায় স্তম্ভিত চা–বণিকসভা থেকে শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব। শিলিগুড়ি মহকুমার ফাঁসিদেওয়ার জয়ন্তিকা চা–বাগানের সহকারি ম্যানেজার নীলাঞ্জন ভদ্রকে খুনের ঘটনার এবার কিনারা করল পুলিশ।
এদিকে খুনের কয়েক ঘন্টার মধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে ঘটনার মূল অভিযুক্তকে। ধৃত এলথ্রুস এক্কা ওই চা–বাগানের সর্দার। টাকার লেনদেন নিয়ে বচসা হয়েছিল দু’পক্ষের মধ্যে। তারপরই ঘটেছে খুনের ঘটনা। সহকারি ম্যানেজারের খুনের ঘটনায় ক্ষুব্ধ চা–বাগান কর্তৃপক্ষ–সহ চা–বাগানের শ্রমিকরা। গোটা ঘটনার তদন্ত করছে পুলিশ। প্রতিকূল আবহাওয়ার জেরে উৎপাদন মার খেয়ে লোকসানে পড়ছে উত্তরবঙ্গের চা–শিল্প। এমন আবহে বাংলার নানা প্রকল্পের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়াতে সচেষ্ট হচ্ছে চা– বাগানগুলি তখন এমন ঘটনা সত্যিই অকল্পনীয়। চা–বাগানের ভিতরে ম্যানেজারের রক্তাক্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘাড়ে কোপ দিয়ে খুন করা হয় তাঁকে।
আরও পড়ুন: দিঘায় গড়ে উঠবে ওয়াটার পার্ক, প্রকল্প হাতে নিচ্ছে দিঘা–শঙ্করপুর উন্নয়ন সংস্থা, এল সুখবর
অন্যদিকে পাতা তোলার কাজ পরিদর্শন করতে বেরিয়ে ছিলেন সহকারি ম্যানেজার নীলাঞ্জন ভদ্র (৪৫)। নিজেই মোটরবাইক চালিয়ে চা–বাগানের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। পিছন থেকে তখনই তাঁর ঘাড়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দেওয়া হয়। তাতেই মোটরবাইক থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ফোন করার জন্য পকেট থেকে মোবাইল বের করলেও আর সুযোগ পাননি। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ। তখন ঘটনাস্থলে আসেন এসডিপিও নকশালবাড়ি, সিআই নকশালবাড়ি সহ বিশাল পুলিশ বাহিনী। এই খুনের ঘটনার কয়েক ঘন্টার মধেই একজন শ্রমিককে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তিন সদস্যের ফরেনসিক টিম ঘটনাস্থলে নমুনা সংগ্রহ করে।
এছাড়া আলিপুরদুয়ার জেলার হামিল্টনগঞ্জের বাসিন্দা ছিলেন মৃত নীলাঞ্জন ভদ্র। চার বছর আগে জয়ন্তিকা চা–বাগানের সহকারি ম্যানেজার হিসেবে কাজ শুরু করেন। মা, স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে চা–বাগানের কোয়ার্টারেই থাকতেন। মৃতদেহের ভিড় থেকে এক শ্রমিক খুনের বিষয় নিয়ে ফিসফিস করতেই পুলিশের সন্দেহ হয়। তাকে ধরে নিয়ে গিয়ে জেরা করতেই সে খুনের কথা স্বীকার করে। পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। পরে পুলিশ খুনে ব্যবহৃত অস্ত্রটিও উদ্ধার করে। এই বিষয়ে কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান স্মল টি গ্রোয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, ‘এই ঘটনার পর চা বাগান কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। উৎপাদন ব্যাহত হবে।’ উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে চা–বাগানের ম্যানেজার খুন হন জলপাইগুড়ির রাজগঞ্জের ভাণ্ডিরবাড়িতে। আর কার্শিয়াংয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিষেক রায় জানান, এলথ্রুস এক্কা নামে একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সে খুনের কথা স্বীকার করেছে। খুনে ব্যবহার করা অস্ত্রও উদ্ধার হয়েছে।’