শিলিগুড়ি টাউন স্টেশন। এই স্টেশনের একটা ঐতিহ্য আছে। যেখানে বাংলার একাধিক মনীষীদের পদধূলি পড়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে বাঘাযতীন, গান্ধীজি, চিত্তরঞ্জন দাশ, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর পদধূলি পড়েছে শহর শিলিগুড়ির ঐতিহ্যবাহী এই টাউন স্টেশনে। আজ ওই স্টেশন এখন জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বটগাছের ঝুরি নেমে এসেছে দেওয়ালে। ফেটে গিয়েছে মাটি, খসে পড়েছে চাঙর, ভগ্নপ্রায় দশা হয়ে রয়েছে। কিন্তু কোনও উদ্যোগ নেই রেল দফতরের। অথচ এই স্টেশনই হেরিটেজ তকমা পেয়েছে। অবহেলায় পড়ে থাকা টাউন স্টেশন এখন নেশাড়ুদের আড্ডাখানা। যা নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে মানুষজনের।
ঐতিহ্যবাহী টাউন স্টেশন যে নেশাড়ুদের দখলে চলে যাবে তা কেউ কল্পনাও করতে পারেননি। কালক্রমে এটি নেশাড়ুদের ঠেকে পরিণত হয়েছে। ভেঙে পড়া পরিকাঠামো নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে টাউন স্টেশন। দিনের বেলা থেকেই এখানে তরুণরা ভিড় করে নেশা করার জন্য। একদা বহু যাত্রীবাহী ট্রেন এই স্টেশনে থামত। জংশন থেকে ফেরত দার্জিলিং মেলও টাউন স্টেশনে দাঁড়াত। এখন সে সব অতীত। এখন দু’একটা মালগাড়ি দাঁড়ায়। আর কোনও ট্রেন দাঁড়ায় না। তাই স্থানীয় বসতি এলাকার মানুষজন স্টেশনে জামাকাপড় মেলে। চারিদিকে ভরে গিয়েছে আবর্জনায়। রেল স্টেশনের এমন অবস্থা দেখে এবার এগিয়ে এল শিলিগুড়ি পুরসভা। টাউন স্টেশনের গৌরব ফেরাতে উদ্যোগ নিচ্ছে তারা।
আরও পড়ুন: মালদায় পঞ্চায়েত সচিবকে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ, জমি বিবাদের জেরেই কি হত্যা?
শিলিগুড়ি পুরনো টাউন স্টেশনকে পুনরুজ্জীবিত করতে রেলের কোন উদ্যোগ নেই। জবরদখলকারীদের দখলে চলে গিয়েছে টাউন স্টেশনের একাংশ। চড়ে বেড়াচ্ছে গরু, ছাগল। এখন প্ল্যাটফর্মের উপর দিয়ে মোটরবাইক, সাইকেল, ভ্যান চলে। শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব এই বিষয়ে বলেন, ‘ঐতিহ্যবাহী টাউন স্টেশনকে বাঁচিয়ে রাখতে শিলিগুড়ি পুরনিগম সবরকম সহযোগিতা করবে রেলকে। এটা নিয়ে রেলমন্ত্রীকে চিঠি পাঠানো হলেও এখনও কোনও উত্তর আসেনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রেলমন্ত্রী থাকাকালীন দু’একটা ট্রেন এই স্টেশনে আসা–যাওয়া করত। অনেক মনীষীর স্মৃতি এই স্টেশনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এটাকে রক্ষা করা উচিত রেলের। রেল যদি না পারে তাহলে আমাদের বললে আমরাই স্টেশনের রক্ষণাবেক্ষণ করব।’
অনেকে এখানে বসে তাস খেলেন, আড্ডা দেন। আর সন্ধ্যা নামতেই অসামাজিক কাজকর্ম শুরু হয়ে যায়। দিনের বেলা নেশা করে এখানে পড়ে থাকে অনেকেই। গান্ধীজি থেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, বাঘাযতীন, আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, পুন্যলতা চক্রবর্তী, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, অরবিন্দ ঘোষ, সুভাষচন্দ্র বসু, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস, শিবনাথ শাস্ত্রী, শরৎচন্দ্র বসু নেমেছেন একদা এই স্টেশন। আজ সেটারই এমন অবস্থা। স্বাধীনতার আগে ১৮৭৯ সালে কলকাতার সঙ্গে শিলিগুড়িকে রেলপথে জুড়তে তৈরি হয়েছিল টাউন স্টেশন। ১৮৮১ সালের ৪ জুলাই প্রথম টয়ট্রেন দার্জিলিংয়ে যায় এই স্টেশন থেকেই। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতাল, শিলিগুড়ি মুখ্য ডাকঘর, শিলিগুড়ি কোর্ট, ট্রেজারি বিল্ডিং, স্কুল, কলেজ গড়ে উঠেছিল শিলিগুড়ি টাউন স্টেশনের চারপাশে। গড়ে উঠেছিল চারটি ঘরের সুদৃশ ডাকবাংলো। এখন সেসব অতীত।