মাস্টারমশাইয়ের মন ভাল নেই। মেঘে মেঘে বেলা হয়েছে ৯০ বছর বয়স। মাস্টারমশাই বলেই তাঁকে সবাই চেনেন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের জমানায় মন্ত্রীও হয়েছিলেন। একুশের নির্বাচনের আগে দমবন্ধ হয়ে আসায় পদ্মাসনে বসেছিলেন। কিন্তু একুশের নির্বাচনের ফলাফলের পর মনের টান নেই বলেই রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়েছেন সিঙ্গুরের মাস্টারমশাই রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। তাই তিনি বলেন, ‘বিজেপির কাজকর্মের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছি না। ঘুণ ধরা সংগঠন। এখানে এখন আমাকে বিশেষ সম্মান দিয়ে ডাকাও হয় না।’
শিক্ষক দিবসে ‘মাস্টারমশাই’–এর এই মনের অবস্থা প্রকাশ্যে আসতেই এখন রাজ্য–রাজনীতিতে চর্চিত বিষয় হয়ে উঠে্ছে। কেমন আছেন মাস্টারমশাই? শিক্ষক দিবসে জানতে চেয়েছিল এক সংবাদমাধ্যম। সেখানেই তিনি বলেন, ‘বিজেপির একটি গোষ্ঠী চক্রান্ত করে আমায় সিঙ্গুর বিধানসভা আসনে হারিয়েছে।’ একদা ছাত্র বেচারাম মান্নার কাছেই হারতে হয় মাস্টারমশাইকে। এখন দিন কাটে বই পড়ে। মন ভাল নেই। তাই কারও সঙ্গে তেমন যোগাযোগ রাখেন না বলেই খবর।
বাংলার রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কেরিয়ারে টার্নিং পয়েন্ট এই সিঙ্গুর। আর সেই টার্নিং পয়েন্টে জড়িয়ে ‘মাস্টারমশাই’ রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের নাম। কিন্তু দমবন্ধ অবস্থা কাটাতে যে সেফ হোমে তিনি গিয়ে ছিলেন সেখানে তিনি নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেন না। তাই শিক্ষক দিবসে রবীন্দ্রনাথের বিলাপ, ‘সিঙ্গুরে ভোট ছিল ১০ এপ্রিল। আর ঠিক দু’দিন আগে ৮ তারিখ স্থানীয় মণ্ডল সভাপতি–সহ সাতজন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন।’ অর্থাৎ সেই আঙুল তুললেন বেচারাম মান্নার দিকে। বিজেপি– বেচারাম গোপন আঁতাত পরাজয়ের কারণ!
উল্লেখ্য, সিঙ্গুর মহামায়া উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রায় ৪০ বছর শিক্ষকতা করেছেন রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য। ১৯৯৭ সালে অবসর নেন। তারপর মাস্টারমশাইয়ের রাজনৈতিক উত্থান। ২০০১ থেকে ২০১৬ টানা চারবার সিঙ্গুর থেকে বিধায়ক হয়েছেন। তৃণমূল সরকারের মন্ত্রীও হয়েছেন। তাল কাটে ২০২১ সালে। আর আজ মাস্টারমশাই বলেন, ‘বিজেপিতে কাজ করার সুযোগ নেই। জেলা নেতৃত্বের সমন্বয় নেই। একবার চুঁচুড়ায় একটা বৈঠকে ডেকেছিল, গিয়েছিলাম। আর ডাকেনি। বিজেপিতে আমায় শ্রদ্ধা করার মতো নেতা নেই।’
শিক্ষক দিবসেই জানালেন, তিনি অসম্মানিত। তাহলে কী তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরবেন? উত্তরে জানালেন, বিজেপিতে মন না টিকলেও ছেড়ে আসা আগের দলে ফিরতে চান না তিনি। এই বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আর ফেরার ইচ্ছা নেই।’ সিঙ্গুরে মাঠ থেকে পথঘাট আঁকড়েই থাকতে চান মাস্টারমশাই। গ্রামের মানুষের সঙ্গেই বাকি জীবনটা কাটাতে চান তিনি।