বড়দিনের উৎসবের দিনে বহু মানুষ তাদের বন্ধু বা প্রিয়জনকে উপহার দিয়ে খুশি করে থাকেন। তবে এই বিশেষ দিনে যে কোনও একটি উপহার নির্বাচন করা, বেশ কঠিন হয়ে ওঠে অনেকের কাছে। আর সেই উৎসবে স্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য একেবারে পুরসভার একটি লেখার ‘লাভ চিহ্ন’-ই চুরি করে ফেলছিল যুবক। তবে শেষ রক্ষা হল না। ধরে ফেলল পুলিশ। আর তারপরে যা ঘটল তা সকলের মন ছুঁয়ে গেল। পুলিশ আর পুরসভার চেয়ারম্যান নিজে ওই যুবককে স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য কিনে দিলেন একগুচ্ছ গোলাপ। এমনই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটল সিউড়ি পুরসভা এলাকায়।
আরও পড়ুন: জোম্যাটোর ডেলিভারি বয়কে সান্তার পোশাক খুলিয়ে দিল হিন্দু জাগরণ মঞ্চ
কী ঘটেছিল?
জানা যাচ্ছে, ঘটনার সূত্রপাত ২৪ ডিসেম্বর রাতে। সিউড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান সিউড়ি থানায় অভিযোগ জানান, যে সিউড়ি শহরে সার্কিট হাউস লাগোয়া এলইডি বোর্ড থেকে ‘আমার ভালোবাসার সিউড়ি’ লেখায় একটি ‘লাভ’ চিহ্ন ছিল। সেটা চুরি গিয়েছে। সেই ঘটনায় তদন্তে নামে পুলিশ। পরে বীরভূমের মহম্মদবাজার থেকে চুরির ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। ওই যুবকের নাম বাপন বাদ্যকর। পুলিশের জেরায় ওই যুবক চুরির কথা স্বীকার করে নেন। শুধু তাই নয়, চুরির উদ্দেশ্যও জানান যুবক। তিনি পুলিশকে জানান, তার স্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য ওই বড় লাল রঙের লাভ চিহ্নটি চুরি করেছিলেন। কিন্তু, স্ত্রীর কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই প্লাসিকের লাভ চিহ্নটি ভেঙে যায়। ফলে আর স্ত্রীকে দেওয়া হয়নি। যুবকের এমন কথা শুনে তার প্রতি মানবিক মনোভাব দেখান পুরসভার চেয়ারম্যান উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায় ও পুলিশ। চেয়ারম্যান নিজেই ওই যুবককে তার স্ত্রীকে দেওয়ার জন্য এক গুচ্ছ গোলাপ কিনে এনে দেন।
এদিকে, খবর পেয়ে আগেই থানায় এসেছিলেন যুবকের স্ত্রী। তখন একেবারে ফিল্মি কায়দায় থানার বাইরেই স্ত্রীকে সেই গোলাপ দিয়ে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা নিবেদন করেন যুবক। এমন দৃশ্য দেখে মুগ্ধ পুরসভার চেয়ারম্যান, পুলিশ থেকে শুরু করে সকলেই। শুধু তাই নয়, পায়ে হাত দিয়ে স্ত্রীকে প্রণাম করে যুবক প্রতিজ্ঞা করেন, আর কোনদিনও কোনও কারণেই চুরি করবেন না।শেষ পর্যন্ত পুলিশ কাগজে কলমে সই করিয়ে যুবককে ছেড়ে দেয়। এমন ঘটনায় মুগ্ধ হয়ে সিউড়ি পুরসভার চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার গোটা জীবনে এইরকম ভালোবাসার জন্য চুরি কখনও দেখিনি। ওই যুবক প্রতিজ্ঞা করেছেন আর কখনই চুরি করবেন না।’