আবার সংবাদে উঠে এলো জমি আন্দোলনের জেলা সিঙ্গুরের নাম। তবে সেটা কোনও আন্দোলনের জন্য নয়। এমনকী কেন্দ্র–রাজ্য তরজাও নয়। অথচ কপালে চোখ উঠেছে পুলিশ অফিসারদের। কারণ ৩৪ বছরের এক যুবকের সঙ্গে প্রায় ৪০০ মহিলার যোগাযোগ! এমনকী তার শিকারের তালিকায় কলকাতা পুলিশের এক কর্তার নিকটাত্মীয়াও! স্মার্ট সেই যুবকের কথাবার্তা, স্টাইল এবং বড় বড় স্বপ্ন ফেরী করে বহু যুবতীর হৃদয়ে হিল্লোল তুলেছিল।
কিন্তু সম্প্রতি এক মহিলাকে প্রতারণা ও ধর্ষণের অভিযোগে কলকাতার রাজারহাটের একটি বিলাসবহুল হোটেল থেকে রাকেশ রায়চৌধুরী নামে ওই যুবককে গ্রেফতার করা হয়। তবে এই যুবককে সিঙ্গুর থানার অফিসার গ্রেফতার করেছেন। তার পর থেকেই প্রশ্ন উঠছে সিঙ্গুর থানা কেন? পুলিশ সূত্রে খবর, কলকাতায় বহু জায়গা ঘুরে ইদানীং সে সিঙ্গুরে ঘাঁটি গেড়েছিল। বাবার পর্যটন ব্যবসার আড়ালে প্রচুর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ হয় রাকেশের। সেখান থেকেই মহিলাদের সঙ্গে ফেসবুকে আলাপ জমিয়ে প্রতারণায় হাত পাকায় ছ’ফুট লম্বা, উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের সুঠাম চেহারার রাকেশ।
বিলাসবহুল জীবনের মধ্যে রয়েছে, পাঞ্জাবি বান্ধবীর সঙ্গে এক সপ্তাহ ভুটান ঘুরে এসেই অন্য এক মহিলার সঙ্গে রাজারহাটের হোটেলে রাকেশ এলাহিভাবে দিন কাটাচ্ছিল। রাকেশ এখন অবশ্য জেলে। রাকেশের জীবনধারা দেখে হতবাক হুগলি জেলা পুলিশের অফিসাররা। বহু মহিলার সঙ্গে সে প্রতারণা করেছে বলে অভিযোগ। রাকেশের বাবা–মা বাগডোগরায় থাকেন। একমাত্র সন্তানের কুকর্মে তাঁরা বীতশ্রদ্ধ। রাকেশ তাঁদের সঙ্গে থাকত না। সে বেলঘরিয়ায় থাকত। রাকেশের মোবাইলের ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৪০০ মহিলার সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। সেখান থেকেই আসত অর্থ। আর তা দিয়ে ফুর্তির জীবন কাটাত রাকেশ। ২৭৭ জন মহিলাকে সে ব্লক করেছে কাজ হাসিল হবার পর। প্রতারিত মহিলার সংখ্যা ৮০ জনেরও বেশি। এমনকী রাকেশ নারীপাচার চক্রেও যুক্ত বলে পুলিশের অনুমান।
রাকেশ আলাপের পরে মহিলাদের সঙ্গে দেখা করা থেকে বেড়াতে যাওয়া, হোটেলে খাওয়া–থাকা এবং শেষে বিয়েও করত। পকেটে সবসময় শাঁখা-সিঁদুর রাখত। তবে কত সংখ্যাক বিয়ে সে করেছে তা হদিশ করতে পারেনি পুলিশ। কিন্তু যেটুকু জানতে পেরেছে তাতে সারা রাজ্যে তার একাধিক স্ত্রী রয়েছে। কিন্তু কোনওটি আইনত বিয়ে নয়। সিঙ্গুর থানায় এমন অনেক মহিলা বিয়ে করে প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ দায়ের করেছেন।
সম্প্রতি এক মহিলাকে প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে সিঙ্গুরের ভাড়াবাড়িতে তাঁর সঙ্গে ‘ট্যুর অ্যান্ড ট্র্যাভেল’ ব্যবসা খোলে। মহিলাকে ম্যানেজিং ডিরেক্টর করে। আবার অন্য এক মহিলার সঙ্গে ভুটান বেড়াতে যায়। অল্পবয়সি স্বামীহারা যুবতী, বিবাহবিচ্ছেদ হয়েছে এমন মহিলারাই মূলত রাকেশের শিকার। অবিবাহিত মহিলাও তালিকায় রয়েছে তুলনায় কম। টিটাগড়, নারায়ণপুর, সিঙ্গুর–সহ বেশ কয়েকটি থানায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা রয়েছে।