বিএসএফ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গে রাজ্য পুলিশের যৌথ প্রয়াসে কাজ হতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে হলেও ছন্দে ফিরছে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান-সহ অন্য়ান্য উপদ্রুত এলাকা। আজ (১৫ এপ্রিল, ২০২৫) বছর শুরুর দিন। বাংলা ও বাঙালির নববর্ষ - পয়লা বৈশাখ! অথচ, 'আনন্দের' এই দিনেও মুর্শিদাবাদবাসীর একটা বড় অংশ রয়েছেন আতঙ্কে। কিন্তু, তারই মধ্যে রাজ্য প্রশাসন, কেন্দ্রীয় বাহিনী ও বিএসএফ-এর যৌথ প্রচেষ্টায় এদিনই ধুলিয়ানে ইতিউতি দোকান-বাজার খুলতে দেখা গেল। যা গত কয়েকদিন ধরে ছিল ঝাঁপবন্ধ। বছর শুরুর দিনে ফের কাজে ফিরলেন স্থানীয় বিড়ি মহল্লার শ্রমিকরাও।
সংবাদমাধ্যমের হাতে এখনও পর্যন্ত যেটুকু তথ্য এসেছে, তা হল - ধুলিয়ান, সুতি, সামশেরগঞ্জ-সহ মুর্শিদাবাদের বিস্তীর্ণ এলাকায় হিংসা রুখতে ও স্বাভাবিক জনজীবন ফেরাতে বেশ কিছু পরিকল্পনা করা হয়েছে। এগোনো হচ্ছে সেভাবেই। প্রথমত - কেন্দ্রীয় বাহিনী ও বিএসএফ রাজ্য পুলিশ ও প্রশাসনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সমন্বয় রেখেই কাজ করছে।
উপদ্রুত এলাকায় বাহিনীর রুটমার্চ চলছে। তাদের উপস্থিতি রয়েছে সর্বত্র। কার্যত মানুষের দোরে দোরে গিয়ে পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বড় কর্তারা কথা বলছেন। মানুষকে আশ্বস্ত করছেন, তাঁদের নিরাপত্তা প্রদান ও পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
এছাড়াও, গত রবিবার থেকে পুলিশ পক্ষ থেকে প্রত্যকেটি এলাকায় শান্তি বৈঠক করা হচ্ছে। সূত্রের দাবি, শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টাতেই এমন অন্তত শতাধিক শান্তি বৈঠক করা হয়েছে। সেই বৈঠকগুলিতে স্থানীয় থানার ওসি থেকে শুরু করে পুলিশের বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকরা উপস্থিত থাকছেন। বৈঠকে ডাকা হচ্ছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের। তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করেই এলাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
একইসঙ্গে, নতুন করে যাতে কোনওভাবে হিংসা ছড়ানোর চেষ্টা না করা হয়, কেউ যাতে এই কাজে প্ররোচনা দিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে শান্তি কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। এই কমিটিগুলি এলাকাভিত্তিক। এবং সেই কমিটিগুলির মাথায় এমন ব্যক্তিদের রাখা হয়েছে, যাঁদের উপর এলাকার মানুষের আস্থা রয়েছে এবং যাঁদের কথা তাঁরা অন্তত অমান্য করতে চাইবেন না।
এই শান্তি কমিটির কাজ হল, কোথাও হিংসা ছড়ানোর এতটুকু অপচেষ্টা চোখে পড়লেই, বা এই সংক্রান্ত কোনও খবর কানে আসামাত্র তা পুলিশকে সঙ্গে সঙ্গে জানানো। যাতে হিংসা ছড়ানোর আগেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে পাকড়াও করা যায়।
এত সব প্রয়াসের পর মঙ্গলবার সকালে - পয়লা বৈশাখের দিন ধুলিয়ান বাজারে বেশ কয়েকটি মিষ্টির দোকান খুলেছে বলে জানা গিয়েছে। এছাড়াও খান কয়েক কাপড়ের বিপণনী ও ওষুধের দোকানও খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। দোকানে খুব অল্প সংখ্য়ায় হলেও ক্রেতারা আসছেন। সামশেরগঞ্জ এবং ধুলিয়ানে বিড়ি শ্রমিকদের যে মহল্লা রয়েছে, এদিন সেই সমস্ত জায়গাতেও নতুন করে কাজ শুরু হয়েছে। অশান্তি ভয়াল ছবিটা খুব ধীরে হলেও ফিকে হওয়া শুরু হয়েছে।
যদিও অন্যদিকে প্রশাসন কিন্তু সতর্ক রয়েছে। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, হিংসায় মদতকারীদের কোনওভাবেই রেয়াত করা হবে না। এই বিষয়ে একই সুর শোনা গিয়েছে রাজ্য পুলিশের এডিজি দক্ষিণবঙ্গ সুপ্রতিম সরকার এবং বিএসএফ-এর দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি নীলোৎপল পাণ্ডের গলায়।