শুভেন্দু–দিব্যেন্দু–সৌমেন্দু। তিন ভাই। আর মাথার উপর তাঁদের বাবা শিশির অধিকারী। ইতিমধ্যেই দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে গেরুয়া শিবিরে গিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। তখন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়েছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের যুবরাজ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। যে নিজের ঘরেই পদ্ম ফোটাতে পারেনি সে কি করে বাংলায় পদ্ম ফোটাবে! জবাব এসেছিল, ঘরেও পদ্ম ফুটবে। এবার সেই সময় এসে গিয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
পরিস্থিতি বিচার করে দেখা যাচ্ছে, শিশির অধিকারীর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করে গিয়েছেন জ্যোতির্ময় সিং মাহাত। তিনি বিজেপি সাংসদ। সৌমেন্দু পুর প্রশাসকের পদ খোয়ানোর পর ক্ষুব্ধ অধিকারী পরিবার। দাদা শুভেন্দুর হাত ধরে সৌমেন্দুও এবার গেরুয়া শিবিরেই যেতে চলেছেন বলে জল্পনা জেলাজুড়ে। আজ কাঁথি পুরসভার পুর প্রশাসকের দায়িত্ব নিচ্ছেন সিদ্ধার্থ মাইতি। তাই শান্তিকুঞ্জে অশান্তি পৌঁছে দিয়ে সফল তৃণমূল কংগ্রেস বলে মনে করা হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে শুক্রবারই দলবদল করতে পারেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই সৌম্যেন্দু অধিকারী। শুক্রবারই নাকি কাঁথির ডরমেটরি মাঠে দাদা শুভেন্দুর জনসভার মঞ্চেই বিজেপি’র পতাকা হাতে তুলে নিতে চলেছেন সৌমেন্দু অধিকারী। যদিও এই বিষয়ে স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব বা সৌমেন্দুর কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।
শুভেন্দুর দলবদলের পর ফিরহাদ হাকিম, সৌগত রায়ের সভামঞ্চে কিংবা মিছিলে দেখা যায়নি অধিকারী পরিবারের কাউকেই। তাতে জল্পনা যে বেশ কয়েক গুণ বেড়েছিল সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তারই মাঝে মঙ্গলবার ব্যারাকপুর থেকে অধিকারী পরিবারেও পদ্ম ফোটানোর দাবি জানিয়েছিলেন শুভেন্দু। তার ঠিক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই পদ হারিয়েছেন সৌমেন্দু। কাঁথির পুর প্রশাসক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে তাঁকে। তখনই সৌমেন্দুর পাশে দাঁড়িয়েছেন শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দুও।
পরবর্তী লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ সালে। সেখানে এখনই দল ছাড়ছেন না দিব্যেন্দু অধিকারী। তিনি তৃণমূলে আছেন এবং থাকছেন নিজে মুখেই সে কথা বলেছেন। তবে দল যদি তাড়িয়ে দেয় তাহলে তাঁকে গেরুয়া শিবিরেই যেতে হবে। সুতরাং এখন তিনি তৃণমুল কংগ্রেসেই আছেন। শিশির অধিকারী পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনে টিকিট পাচ্ছেন না এটা একেবারে নিশ্চিত খবর। তাই তাঁকে এখন থেকেই সাইড করা হচ্ছে। সুতরাং শিশির অধিকারী শেষ পর্যন্ত গেরুয়া শিবিরে যেতে পারেন বলে ধরে নিচ্ছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
গত রবিবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডায়মন্ডহারবারের সভা থেকে নাম না করে শুভেন্দুর উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘একুশ বছর তৃণমূলে ছিল বলে এখন না কি লজ্জা করছে। তোমার বাবা–ভাই তো এখনও তৃণমূলে রয়েছেন। একই বাড়িতে থাকতে লজ্জা করে না। নিজের বাড়িতে পদ্ম ফোটাতে পারছে না, উনি বাংলায় পদ্মফুল ফোটাবেন।’ পাল্টা খড়দহের সভা থেকে শুভেন্দু বলেন, ‘মাননীয় ভাইপোর রাগ হয়েছে। বলেছে, ‘তোমার লজ্জা করে না, তুমি পদ্মফুল ফোটাবে বলছ, তোমার বাড়িতে তো ঘাসফুল রয়েছে’। আমি বলছি, সবে তো কুঁড়িটা ফুটেছে। এখনও তো বাসন্তীপুজো হয়নি, রামনবমী আসেনি। রামনবমী আসছে। আমার বাড়ির লোকেরাও পদ্মফুল ফোটাবে। তোমার বাড়ির ভেতরেও ঢুকব।’
উল্লেখ্য, আগে কাঁথির পুর ভবনেই বসতেন অধিকারী পরিবারের চার সদস্যই। শিশির অধিকারী, দিব্যেন্দু অধিকারী ও সৌমেন্দু অধিকারী ছাড়াও মাঝে মধ্যে বসতেন শুভেন্দু অধিকারীও। শুভেন্দুর একটি অফিসও ছিল এই পুর ভবনে। তবে আজ থেকে অধিকারী পরিবারের কেউই আর পুর ভবনে বসছেন না। সৌমেন্দুকে পুরপ্রশাসকের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর প্রকাশ্যেই এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেছিলেন শুভেন্দুর আর এক ভাই এবং তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু। শুক্রবার কাঁথির ডরমেটরি মাঠে সভা রয়েছে শুভেন্দুর। ওই সভামঞ্চেই নাকি গেরুয়া শিবিরের পতাকা হাতে তুলে নিতে পারেন অধিকারী পরিবারের আরেক সন্তান। এমনকী ১৬ জন বিদায়ী কাউন্সিলরও নাম লেখাতে পারেন গেরুয়া শিবিরে। আর বাকি দু’জন যাবেন কিছুদিন পরে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।