উত্তরবঙ্গে সাম্প্রতিক বন্যা বিপর্যয়ে অসংখ্য মানুষ সর্বস্ব হারিয়েছেন। ঘরবাড়ি ভেসে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বহু মানুষের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্রও বন্যার জলে তলিয়ে গেছে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে বিশেষ উদ্যোগ নিল রাজ্য সরকার। নবান্নের পক্ষ থেকে শুক্রবার ঘোষণা করা হয়েছে, এপিক কার্ড, আধার, রেশন কার্ডসহ প্রয়োজনীয় সরকারি নথি নতুন করে পাইয়ে দেওয়ার জন্য বিশেষ শিবিরের আয়োজন করা হবে।
আরও পড়ুন: উত্তরের ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে সরকার, শস্য বিমা প্রকল্পে নাম নথিভুক্তিতে শিবির
রাজ্য সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, জনজীবনকে দ্রুত স্বাভাবিক করতে ত্রাণ, পুনর্গঠন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার কাজ চলেছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। সুখিয়াপোখরি-সহ উত্তরবঙ্গের দুর্গম এলাকাগুলিতেও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দিতে প্রশাসন ও বিপর্যয় মোকাবিলা দল দিনরাত পরিশ্রম করছে।
বন্যার পরবর্তী সময়ে নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেই কারণেই আলিপুরদুয়ার, দার্জিলিং, কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি এই চার জেলায় ইতিমধ্যেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন স্বাস্থ্য দফতরের সহযোগিতায় টিকাকরণ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে নেমেছে।
তবে বিরোধীদের অভিযোগ, এখনও বহু এলাকায় সরকারি সাহায্য পৌঁছায়নি। তাদের দাবি, অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে রাস্তা ভেসে যাওয়ায় দুর্গত মানুষদের হাতে ত্রাণ পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। বন্যার জেরে দুধিয়া সেতু-সহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সেতু মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কোথাও সেতু ভেঙে পড়েছে, কোথাও আংশিক ক্ষতি হয়েছে। বহু রাস্তা ধসে পড়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। যদিও রাজ্য প্রশাসনের দাবি, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ শুরু হয়েছে এবং শীঘ্রই স্বাভাবিক অবস্থায় ফেরা সম্ভব হবে।
এরই মধ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখেছেন। সোমবার তিনি দুর্গত অঞ্চল পরিদর্শন শেষে বুধবার কলকাতায় ফিরে আসেন। আগামী সপ্তাহের গোড়াতেই তিনি ফের উত্তরবঙ্গে যাবেন বলে সূত্রের খবর। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই মৃতদের পরিবারপিছু ৫ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য এবং একজন সদস্যকে সরকারি চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। জেলা প্রশাসন ক্ষতিপূরণের চেক পৌঁছে দেওয়া শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে পরের সপ্তাহে উত্তরবঙ্গে গিয়ে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেবেন বলে জানা গেছে। পাশাপাশি, দুর্যোগ মোকাবিলায় অসাধারণ ভূমিকা নেওয়া পুলিশ, স্বাস্থ্যকর্মী ও বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যদেরও সম্মানিত করা হবে।