একেই বলে জেদ। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিন দুয়েক আগে আচমকাই চিরদিনের মতো চলে গিয়েছিলেন বাবা। প্রচন্ড কষ্টে সব কিছু যেন ওলটপালট হয়ে যাচ্ছিল। তবুও দুঃখ বুকে চেপে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন। এরপর নিট পরীক্ষাও দিয়েছিলেন। আর সেখানেই এসেছে অভাবনীয় সাফল্য। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার শুভাঙ্গি দের এই সাফল্য এখন লোকের মুখে মুখে ফিরছে।
বাবা চলে গিয়েছেন। কিন্তু বাবার স্বপ্ন পূরণ করার জন্য় দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করেছেন তিনি। বাবা স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে বড় হয়ে চিকিৎসক হবে। সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন শুভাঙ্গি। কিন্তু কাজটা মোটেই সহজ ছিল না। পূর্ব মেদিনীপুর জেলার রামনগর থানার বড়রাঙ্কুয়া গ্রামের বাসিন্দা শুভাঙ্গী দে। তাঁর এই সাফল্যে গর্বিত তার পরিবার। গর্বিত তাঁর পাড়া প্রতিবেশীরা। বাবার স্বপ্ন পূরণ করেছেন তিনি।
২০২৩ সালের ২৩শে মার্চ। এখনও সেই দিনটা মনে এলে মন খারাপ হয়ে যায় গোটা পরিবারের। সেবার সামনেই ছিল উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল শুভাঙ্গী। এমন সময় নেমে এল বিরাট বিপর্যয়। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার দিন দুয়েক চলে যায় বাবা। আচমকাই সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাবা। আকাশ ভেঙে পড়ে মাথার উপর। দুদিন পরেই জীবনের অন্যতম বড় পরীক্ষা। কীভাবে তারা সামলাবে কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। কান্নায় ভেঙে পড়েন শুভাঙ্গী। আসলে জীবনের চলার পথে বার বার বাবা থাকতেন পাশে। সেই বাবা আচমকাই চলে গেলেন। একাকী হয়ে পড়েন শুভাঙ্গী। আর সেই সময় পাশে এসে দাঁড়ান মা।
এরপর নতুন করে শুরু হয় প্রতিকূল পরিস্থিতিতে পরীক্ষা দেওয়ার পরিস্থিতি। প্রচন্ড কষ্টের মধ্য়েও পরীক্ষা দেন তিনি। সব মিলিয়ে উচ্চমাধ্য়মিক পরীক্ষায় ৪৬৭ নম্বর পেয়েছিলেন তিনি। এরপর শুরু হয় সর্বভারতীয় মেডিক্যালের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসার প্রস্তুতি। কারণ মৃত্য়ুর আগেও যখনই কেরিয়ার নিয়ে বাবার সঙ্গে কথা হত তখনই তিনি বলতেন ডাক্তার হওয়ার প্রস্তুতির কথা। নিট পরীক্ষায় সফল হয়েছেন তিনি।
অত্যন্ত সাফল্যের সঙ্গে তিনি এই পরীক্ষায় কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। যে সমস্ত ছাত্রছাত্রীরা চরম দারিদ্রতা, প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে তাদের কাছে অনুপ্রেরণা শুভাঙ্গী। ছোটবেলা থেকেই মেধাবী ছাত্রী তিনি। কিন্তু বাবার মৃত্যুর পরে স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তিনি চেষ্টার কোনও কসুর করেননি। আর তার ফলও মিলল হাতেনাতে।