কৃষিকাজে সাফল্যের জেরে এবার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পাচ্ছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার নিশ্চিন্তপুরের গৃহবধূ বর্ণালী ধাড়া। কারণ তিনি যে শুধু কৃষিকাজে সাফল্য পেয়েছেন এমন নয়, বরং বর্ণালির হাত ধরে এই জেলার একের পর এক মহিলা কৃষিকাজে স্বনির্ভর হয়েছেন। আর তার জেরে তাঁদের সংসারে সচ্ছলতা এসেছে। স্বামীদের পাশে তাঁরা দাঁড়াতে পেরেছেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে। কৃষিকাজে সাফল্য পেতে রাসায়নিক সার নয়, জৈব সারের মাধ্যমে ফসল ফলিয়ে সংসার চালাচ্ছেন ওই বধূরা। রাত পোহালেই সাধারণতন্ত্র দিবস। এই সাধারণতন্ত্র দিবসে নারীর ক্ষমতায়নকে তুলে ধরে ট্যাবলো সাজাচ্ছে বাংলা। নয়াদিল্লির কর্তব্যপথে কুচকাওয়াজে বাংলার ট্যাবলো দেবে নারীশক্তির বার্তা। আর ওইদিনই রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মর্মুর হাত থেকে পুরষ্কার নেবেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার গৃহবধূ বর্ণালী ধাড়া।
এদিকে বিঘের পর বিঘে জমিতে চাষ হচ্ছে সবজি। স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হাত ধরে তৈরি হচ্ছে নানা সবজি। এখন শীতকাল বলে শীতের সবজি ফলানো হচ্ছে। গরমকালে তখনকার মতো সবজি ফলানো হবে। সেই সবজি ফলিয়ে এখন রমরমিয়ে বিক্রি করছেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। আর সেই উপার্জিত অর্থ দিয়েই তাঁরা স্বামীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এমনই ছবি উঠে এসেছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনা কুলপি ব্লকের করঞ্জলি, নিশ্চিন্তপুর, বেলপুকুর–সহ সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকায়। এই সব এলাকার দু’হাজার মহিলা স্বনির্ভর দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে এভাবেই লাভবান হচ্ছেন।
আরও পড়ন: ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শ্রেণিকক্ষ থেকে উদ্ধার শিক্ষকের ঝুলন্ত দেহ, নরেন্দ্রপুরে আলোড়ন
অন্যদিকে সাধারণ গৃহবধূ থেকে বর্ণালী এখন হয়ে উঠেছেন পুরোদস্তুর কৃষক–রমণী। শুধু একা স্বনির্ভর হয়েছেন এমন নয়, বরং পথ দেখিয়েছেন স্থানীয় অন্য মহিলাদেরও। বর্ণালীর হাত ধরে গ্রামের বেশিরভাগ মহিলাই এখন স্বনির্ভর। নিজের খরচ নিজে চালান। ভার নেন নিজের সংসারেরও। আর এই কাজ করেই নিজেদের স্বপ্নপূরণ করছেন সুন্দরবন এলাকার বধূরা। এই কাজের জন্য কুলপির নিশ্চিন্তপুরের গৃহবধূ বর্ণালী ধারা এবং তাঁর স্বনির্ভর দলকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কুলপির বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার।
এছাড়া দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপির অশ্বত্থতলার বাসিন্দা বর্ণালী ধাড়া। সাধারণতন্ত্র দিবসে ‘উদ্যোগী কৃষক’ হিসেবে রাষ্ট্রপতি পুরষ্কার পেতে চলেছেন তিনি। কৃষিকাজের মাধ্যমে মহিলাদের স্বনির্ভর করে তুলেছেন তিনি। তাঁর কাজের ক্ষেত্র শুধুই সুন্দরবন। ইতিমধ্যে নয়াদিল্লি পৌঁছে গিয়েছেন বর্ণালী। সারা দেশে মোট ১০ জন উদ্যোগী কৃষককে এবার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার দেওয়া হবে। আর তার মধ্যে বাংলা থেকে একমাত্র মনোনীত হয়েছেন বর্ণালী। তাঁর স্বামী পেশায় স্কুল শিক্ষক। তবে একটি সার, বীজের দোকান আছে। নিমপীঠ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র থেকে ২০১৭ সালে প্রশিক্ষণ নেন বর্ণালী। আর রাজ্য সরকারের কৃষি বিষয়ক একাধিক প্রকল্পের কথা জানতে পারেন বর্ণালী। এই সাফল্যে কুলপির বিধায়ক যোগরঞ্জন হালদার বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মহিলাদের জন্য যেমন লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের ব্যবস্থা করেছে, তেমন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের হাতে মুরগির বাচ্চা, বিনামূল্যে শস্য, বীজ, ফলের গাছ দিয়ে তাঁদের পাশেও দাঁড়িয়েছেন। বর্ণালির এই সাফল্যে আমরা গর্বিত।’