দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির নিয়ে রাজ্যে শাসক-বিরোধী তরজা তুঙ্গে উঠেছে। একদিকে, জগন্নাথ মন্দিরের চরিত্র - অর্থাৎ - এটি ঠিক কী ধরনের নির্মাণ, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। জবাবে এবার তাঁকে হুঁশিয়ারি দিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সভাপতি সুপ্রকাশ গিরি।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ নিয়ে যেসমস্ত প্রতিবেদন সামনে এসেছে, সেই অনুসারে - শুভেন্দু অধিকারী দিঘার নবনির্মিত জগন্নাথ মন্দির নিয়ে প্রশ্ন তুলে জানতে চান, এটি জগন্নাথ মন্দির নাকি জগন্নাথ ধাম সাংস্কৃতিক কেন্দ্র?
এমনকী, রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হুঁশিয়ারি দেন, কীভাবে এই মন্দিরের উদ্বোধন করা হয়, তা তিনি দেখে নেবেন!
আর এই প্রেক্ষিতেই শুভেন্দুকে তুলোধনা করেন সুপ্রকাশ গিরি। তিনি পালটা শুভেন্দুকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে আর একটাও কথা বললে জেলায় (পূর্ব মেদিনীপুর) শুভেন্দুর গাড়ি যেখানেই যাবে, সেখানেই আমরা ওঁর গাড়ি আটকাব। জেলার কোথাও ওঁকে গাড়ি নিয়ে এগোতে দেব না।
অন্যদিকে, সুপ্রকাশের এই মন্তব্যকে 'গুন্ডামি' বলে তোপ দেগেছেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার।
তাঁকে উদ্ধৃত করে টিভি নাইন বাংলা অনলাইন পোর্টালে লেখা হয়েছে, 'এটা গুন্ডামি ছাড়া আর কী বলব? বিরোধী দলনেতা মানে একজন ক্যাবিনেট মন্ত্রীর পদমর্যাদার লোক। তাঁর গাড়ি আটকাবে, গুন্ডামি করা হচ্ছে নাকি? আমাদেরও ক্ষমতা আছে। ১২টা সিট জিতে আছি। আমাদেরও ৭০ জন বিধায়ক আছেন। ওই এলাকায় আমাদেরও তো জোর আছে। তাহলে কালকে যদি তৃণমূল লোকেদের গাড়ি আটকাই? এটা গণতন্ত্র নয়।'
প্রসঙ্গত, রবিবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনা,সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা ও অপ্রচারের প্রতিবাদ-সহ একগুচ্ছ ইস্যু সামনে রেখে কাঁথিতে একটি মিছিল ও পথসভা করে জেলা তৃণমূল কংগ্রেস। এই আয়োজনের আরও একটি অন্যতম ইস্যু ছিল দিঘার জগন্নাথ মন্দির এবং সেই সংক্রান্ত বিতর্ক।
রবিবারের ওই কর্মসূচিতে সুপ্রকাশ গিরি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তাঁর বাবা, রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি। সেই অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীকে নিশানা করেন সুপ্রকাশ। জগন্নাথ মন্দির নিয়ে রাজ্যের বিরোধী দলনেতার মন্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে পালটা তাঁকে হুঁশিয়ারি দেন।
প্রসঙ্গত, দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে বিতর্ক শুরু থেকেই চলছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি মুখে যাই বলুক, বাংলার প্রধান বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও এখনও শাসক তৃণমূল কংগ্রেসের সাংগঠনিক শক্তির তুলনায় তারা কয়েক যোজন পিছিয়ে রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ করিয়ে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি আরও কিছু বেশি হিন্দু ভোট নিজের দিকে টেনে নেন, তাহলে বিজেপির সমস্যা আরও বাড়বে। সেই কারণেই দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে গেরুয়া নেতাদের একাংশকে নানা মন্তব্য করতে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু, তাঁরা এ নিয়ে ঝাঁপিয়েও পড়তে পারছেন না। কারণ, তাতে হিতে-বিপরীত হতে পারে। যদিও শুভেন্দু অধিকারী আগাগোড়াই এই ইস্যুতে আক্রমণাত্মক থেকেছেন।