এবার বাংলাদেশকে 'মশা-মাছি' আখ্যা দিয়ে তীব্র আক্রমণ শুভেন্দু অধিকারীর। ২৬ জানুয়ারি মালদার সুকদেবপুরে ২ কিলোমিটার দীর্ঘ মিছিল করেছিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা। সেখান থেকেই বাংলাদেশকে আক্রমণ শানা তিনি। প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক সময়ে এই সুকদেবপুরেই ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল। তাতে সাধারণ গ্রামবাসীরা সীমান্তে গিয়ে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে 'রুখে দাঁড়িয়েছিলেন'। এহেন সুকদেবপুর থেকেই পড়শি দেশকে চরম হুঁশিয়ারি দিয়ে 'ড্রোন ছেড়ে' দেওয়ার কথা বলেন শুভেন্দু। (আরও পড়ুন: খুলনায় হিন্দু পড়ুয়াকে খুনের ঘটনায় 'ঘনিষ্ঠ বন্ধু' গ্রেফতার, ক্রমে বাড়ছে রহস্য)
আরও পড়ুন: 'ভারতীয় আগ্রাসন, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও...', ইস্যু এক, স্লোগান আরেক!
২৬ জানুয়ারি সুকদেবপুরবাসীদের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, 'আপনারা মৌলবাদের বিরুদ্ধে একজোট হয়েছে লড়াই করেছেন। তার জন্য আপনাদের স্যালুট জানাই। রাষ্ট্রবাদের পক্ষে যুবকদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ। প্রবীণরাও এসেছেন। শুকদেবপুরের মানুষ দেশের সৈনিক হিসেবে লড়াই করেছেন। এই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর দলের কর্মচারীরা বিএসএফ-কে আক্রমণ করেন। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে ৫৯৬ কিলোমিটার সীমান্তে কাঁটাতার নেই। জমি দেয়নি রাজ্য। জমি অধিগ্রহণের জন্য কৃষকদের দাবি মতো টাকা দিতে প্রস্তুত কেন্দ্র। তারপরও জমি অধিগ্রহণ করতে দেয়নি রাজ্য। কারণ, রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ঢুকিয়ে জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পশ্চিমবঙ্গকে দখল করতে চায় বর্তমান শাসকদল। সেজন্য জমি দিচ্ছে না। জনসংখ্যার বদল ঘটিয়ে ভোটব্যাঙ্ককে নিশ্চিত রাখতে চায়।' (আরও পড়ুন: এতদিন পরও জারি ধরপাকড়, চট্টগ্রামে গ্রেফতার চিন্ময় প্রভুর আরও ১১ 'অনুগামী')
আরও পড়ুন: সনাতন হল ভারতের 'জাতীয় ধর্ম', ঐক্যের বার্তা দিতে মন্তব্য যোগী আদিত্যনাথের
এরপর মৌলবাদ এবং বাংলাদেশ ইস্যুতে শুভেন্দু বলেন, 'জঙ্গিমুক্ত, মৌলবাদীমুক্ত পশ্চিমবঙ্গ গড়বই। মুসলিমদের সঙ্গে আমাদের কোনও বিরোধ নেই। কিন্তু, যারা ওপার থেকে ঢুকছে, এই লড়াই তাদের বিরুদ্ধে। ভারতের সামরিক শক্তি এখন অনেক উপরে। আমাদের ম্যান পাওয়ার লাগবে না। কয়েকটা ড্রোন ছেড়ে দিলেই কেল্লাফতে। এই মশা-মাছিরা যদি আমাদের বিরুদ্ধে চোখ তুলে, তাহলে জানবেন স্যাকরার ঠুকঠাক, কামরার এক ঘা। ভারত শক্তিশালী দেশ। এরা আঁচড় দিচ্ছে, ঢিল ছুড়ছে। বিএসএফ ধৈর্যের পরীক্ষা দিচ্ছে। কারণ, বাংলাদেশে এখন একটা মৌলবাদী সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। তারা ওখানে সরকার চালাতে পারছে না। হিন্দুদের উপর আক্রমণ হচ্ছে। ওখানে আইনশৃঙ্খলা শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই, যুদ্ধের জিগির তুলে, সীমান্তে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। সুদখোর ইউনুস দেশপ্রেমের জিগির তুলে টিকে থাকতে চান।'
উল্লেখ্য, গত ১৮ জানুয়ারি মালদায় ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে বাংলাদেশিরা চড়াও হয়েছিল বলে অভিযোগ। সেই সময় বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের রুখে দিয়েছিল বিএসএফ। তবে মালদার সুকদেবপুরে এখনও পরিস্থিতি থমথমে। এই আবহে গ্রামবাসীদের সীমান্তের দিকে যাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। গ্রামবাসীদের সংযত থাকার পরামর্শ দিয়েছে বিএসএফ। এদিকে সুকদেবপুরবাসীদের অভিযোগ, ইউনুস জমানাতেই বাংলাদেশিরা ভারতীয় ভূখণ্ডে এসে লুটপাট চালাতে শুরু করেছে। এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিএসএফের ১১৯ নং ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা টানা টহল দিয়ে চলেছেন সীমান্ত এলাকায়।
এর আগে গত ১৮ জানুয়ারির ঘটনায় বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ রুখতে সেখানে কাঁদানে গ্যাসের শেল ফাটানো হয়। সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি জখম হন বলেও দাবি করা হয়েছিল। এদিকে সুকদেবপুরের পাশাপাশি মুর্শিদাবাদের ভগবনগোলাতেও নাকি সম্প্রতি বাংলাদেশিরা সীমান্ত পার করে এসে ভারতীয় ভূখণ্ড থেকে ফসল কেটে নিয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ উঠেছিল।
এদিকে বাংলাদেশিদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া দিতে গেলে আবার তাতে আপত্তি বিজিবির। এদিকে অনুপ্রবেশকারী বা পাচারকারীদের গুলি করলে তাতেও আপত্তি ওপারের শাসক গোষ্ঠীর। প্রসঙ্গত, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই সীমান্তে কাঁটাতার দেওয়া নিয়ে সংঘাত দেখা গিয়েছে বিএসএফ এবং বিজিবির মধ্যে। এই আবহে মালদা সহ একধিক জায়গায় ভারতীয় ভূখণ্ডের কাঁটাতার দিতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে বিএসএফ। এর জেরে সীমান্তের বহু জায়গায় ছড়িয়েছে উত্তেজনা। এই ইস্যুতে বাংলাদেশের দাবি, ১৯৭৫ সালে যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত চুকি দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল, তা অনুযায়ী, সীমান্তের জিরো পয়েন্ট থেকে ১৫০ গজ ভিতরে 'প্রতিরক্ষা কাঠামো' তৈরি করা যাবে। এদিকে ২০১০ সালে অবশ্য বাংলাদেশ ভারতকে লিখিত আকারে অনুমতি দিয়েছিল যে সীমান্তে ১৫০ গজের ভিতরেও প্রয়োজনে কাঁটাতারের বেড়া দিতে পারবে ভারত। এই কথা নিজে স্বীকার করেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গির আলম চৌধুরী। এখন বাংলাদেশের গদিতে 'মুখ' পরিবর্তনের পরে তাদের অভ্যন্তরীণ সমীকরণ যাই হয়ে থাকুক না কেন, আগের সরকারের স্বাক্ষরিত দ্বিপাক্ষিক আন্তর্জাতিক চুক্তি মানতে বাধ্য তারা।