‘জয় মা তারা’—এই ধ্বনি এখন উঠছে না তারাপীঠে। এখন কার্যত জনমানবশূন্য হয়ে পড়েছে এই তীর্থস্থান। আসছে না পর্যটক। দেখা মিলছে না মায়ের ভক্তদের। আর এই আবহে ফিরছে লকডাউনের স্মৃতি। করোনাভাইরাসের দাপটে এই ছবিই আগে দেখা গিয়েছিল। আর এখন বর্ধমান–সাহেবগঞ্জ লুপ লাইনে কাজের জেরে ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। আর তার জেরে এখন মায়ের ভক্তরা এখানে আসতে পারছেন না। ফলে স্মৃতি হাতড়ে শিউরে উঠছেন এখানকার মানুষজন।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? এখানে টানা ২০ দিন ধরে বহু ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। এই ট্রেন বাতিলের প্রথম দিনেই কার্যত লকডাউনের চেহারা নিল তারাপীঠ। এই তীর্থস্থানে মানুষের আনাগোনার দেখা মিলল না। যে দু’চারজন মন্দিরে পুজো দিতে এলেন তাঁরা স্থানীয় মানুষজন। এভাবে মায়ের দর্শন অনেকেই করতে পারেন না। সেখানে নির্বিঘ্নে মায়ের পুজো দিয়ে ফিরলেন স্থানীয় মানুষজন। আর তাতেই পর্যটন কেন্দ্র তারাপীঠে ফিরল লকডাউনের স্মৃতি। সকাল থেকেই যে মন্দির চত্বর কেঁপে ওঠে ‘জয় মা তারা’ ধ্বনিতে। সেখানে কার্যত ভক্তশূন্য হয়ে পড়ায় খাঁ খাঁ করল মন্দির চত্ত্বর।
রেলের সমস্যাটি ঠিক কী? তারাপীঠে বেশিরভাগ পর্যটকই ট্রেন পথ ধরে আসেন। আর স্টেশনে নেমে যানবাহন ধরে যান মায়ের মন্দিরে। রামপুরহাট স্টেশনে এটাই ছিল নিত্য দিনের দৃশ্য। এখানে কবিগুরু, ইন্টারসিটি, শহিদ, মা তারা, হাওড়া–জয়নগর, মালদা–দিঘা এক্সপ্রেস ট্রেন ধরে পর্যটকরা আসেন। সেখানে রামপুরহাট ও চাতরার মাঝে তৃতীয় লাইনের কাজের জন্য ১১ জোড়া মেল এবং এক্সপ্রেস ট্রেন বাতিল করা হয়েছে। বাতিল হয়েছে বর্ধমান–সাহেবগঞ্জ সহ বহু লোকাল ট্রেন। আর একাধিক এক্সপ্রেস ট্রেনের রুট বদল করা হয়েছে। আজিমগঞ্জ–কাটোয়া ঘুরপথে চালানো হচ্ছে। মাঝরাতে হাওড়া–জামালপুর, পদাতিক, সরাইঘাট এবং বনাঞ্চলের মতো ট্রেন চলাচল করলেও তাতে খুব একটা পর্যটক আসেন না। তাই তারাপীঠে পর্যটক আসতে না পারায় ব্যাপক প্রভাব পড়েছে।
আরও পড়ুন: আবার মহার্ঘ হতে চলেছে পাউরুটি, টান পড়বে পকেটে, আর কত দাম বাড়বে?
আর কী জানা যাচ্ছে? তারাপীঠ মন্দিরকে ঘিরে যে সমস্ত স্টল রয়েছে তারা এখন মাছি তাড়াচ্ছে। হোটেলগুলি হাপিত্যেশ করে বসে আছে। রামপুরহাট স্টেশন ত্যাগ করেছেন বহু অটো–টোটো চালক। পুণ্যার্থীদের ভিড় নেই। ভক্তদের ধ্বনি নেই। মানুষের আনাগোনা নেই। মিষ্টি খাচ্ছে মাছি। দোকানগুলি ঝিমিয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি দেখে সেবাইতদের একাংশ বলছেন, করোনাভাইরাসের সময়ে লকডাউনের জেরে দীর্ঘদিন ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল। তখন মন্দির খোলা থাকলেও ভক্তদের আনাগোনা ছিল না। পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছিল। এখন সেই স্মৃতি আবার ফিরে এসেছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন সকল ব্যবসায়ীরা।