খামখেয়ালি আবহাওয়া। কখনও বৃষ্টি হচ্ছে। আবার কখনও দেখা নেই বৃষ্টির। আর তার জেরে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে ফসলের। বিশেষ করে চা–বাগানগুলিতে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এই অনাবৃষ্টির জেরে। এই চা–পাতা উৎপাদন মূলত উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে দেখা যায়। পাহাড়ি এলাকার গায়ে চা–বাগান। সেখানে বৃষ্টির দেখা নেই। তাই চা–শিল্পে বড়রকম সংকট নেমে এসেছে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ারের প্রায় ২০০টি চা–বাগানে চায়ের উৎপাদন মার খেয়েছে। এই আবহে চা শ্রমিক এবং বাগান বাঁচাতে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিল চা মালিকদের সংগঠন আইটিপিএ।
একদিকে এই চা বিদেশে রফতানি করা হয়। তাতে বঙ্গে বাড়তি টাকাকড়ির মুখ দেখতে পান চা–মালিক থেকে শ্রমিকরা। তাছাড়া চা–বাগান থেকে যে চা উৎপাদন হয় তা তুলে ধরা হয় উত্তরবঙ্গে আসা পর্যটকদের সামনে। সেখান থেকেও বাড়তি আয় হয়। কিন্তু এবার প্রচণ্ড গরম পড়েছে। তা থেকে রেহাই পেতে গরমের ছুটিতে অনেকেই পাড়ি দেন উত্তরবঙ্গের শৈলশহরে। কিন্তু আগের মতো চায়ের পসরা সাজিয়ে বসার পরিমাণ কমে গিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূল কংগ্রেসের চা শ্রমিক সংগঠন শিল্পের কথা সবিস্তারে জানিয়ে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। অপরদিকে চা উৎপাদন কমতে থাকায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
এদিকে এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় টি–বোর্ডের সমালোচনা চরমে তুলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের চা শ্রমিক সংগঠনের নেতারা এবং রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশচিক বরাইক। আইটিপিএ সংগঠনের ডুয়ার্স শাখার সচিব রামঅবতার শর্মা বলেন, ‘চা–শিল্পের ৫০ বছরের ইতিহাসে এমন ভয়ঙ্কর সংকট আগে কখনও হয়নি। বৃষ্টির অভাবে গাছ মরে যাচ্ছে। সরকারি আর্থিক প্যাকেজ এখন পাওয়া না গেলে অনেক বাগানকে আর বাঁচানো যাবে না। বৃষ্টির অভাবে জলস্তর নীচে নেমে গিয়েছে। পাম্প করেও নীচ থেকে জল উঠছে না। আগামী কয়েক মাস বিদ্যুৎ বিলে রাজ্য সরকার ছাড় দিলে অনেকটা সুরাহা হবে। সারে ভর্তুকি দিলেও আর্থিক ঘাটতি মিটবে।’
অন্যদিকে এখন এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, শ্রমিকরা সপ্তাহে মাত্র তিনদিন কাজ পাচ্ছেন। বাকি তিনদিন নো ওয়ার্ক নো পে। তবে শ্রমিকরাও চা–বাগান মালিকদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ প্রকাশচিক বরাইক বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সরকার কীটনাশকের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বৃষ্টি হচ্ছে না বলে চা–গাছে পোকামাকড়ের উপদ্রব শুরু হয়ে গিয়েছে। বৃষ্টি না হওয়ায় বহু বাগানে চা–গাছ মরে যাচ্ছে। এই অবস্থার কথা জেনেও কেন্দ্রীয় সরকার চুপ করে আছে।’