অবিরাম বৃষ্টি ও ধসে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের জনজীবনের পাশাপাশি বড়সড় ধাক্কা খেল রাজ্যের অন্যতম অর্থনৈতিক স্তম্ভ চা শিল্প। ডুয়ার্সের প্রায় ৪০টি চা বাগান ব্যাপক ক্ষতির মুখে। প্রাথমিক হিসেব বলছে, ক্ষতির পরিমাণ ১১ কোটি টাকারও বেশি। কোথাও নদীর বাঁধ ভেঙে গেছে, কোথাও আবার বৃষ্টির জলে তলিয়ে গেছে পুরো চা বাগান। ফলে চা গাছ, মজুত কাঁচা পাতা ও উৎপাদিত চায়ের বিশাল ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: উত্তরবঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে হামলা! রক্তাক্ত হলেন খগেন, আহত শঙ্কর
চা শ্রমিক ও বাগান মালিকরা এখন কার্যত উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। কারণ, অনেক জায়গায় বাগানের একাংশ নদীর জলে বিলীন হয়ে গেছে। বিশেষত নাগরাকাটা, বানারহাট ও মেচকাপাড়া এলাকার পরিস্থিতি ভয়াবহ। নাগরাকাটার চ্যাংমারি চা বাগানে প্রায় ৫০ হাজার চা গাছ ও ৭০ হাজার কেজি কাঁচা পাতা নষ্ট হয়েছে বলে জানা গেছে। বন্যায় ডুবে গেছে বাগানের ২৫ হেক্টর জমি, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শ্রমিকদের ১৫০টি কোয়ার্টার, ১২টি সেতু ও কারখানার বিপুল পরিমাণ চা মজুত। মোট ক্ষতির অঙ্ক দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।
জলপাইগুড়ির কুরতি চা বাগানে তিনটি রাস্তা ভেঙে পড়েছে, ক্ষতি প্রায় ৫ লক্ষ টাকার। গাটিয়া নদীর গতিপথ পরিবর্তনের আশঙ্কায় উদ্বেগ বেড়েছে স্থানীয়দের।
অন্যদিকে, বানারহাটের মরাঘাট ও রিয়াবাড়ি বাগানও চরম বিপন্ন অবস্থায়। আলিপুরদুয়ারের মেচকাপাড়া বাগানেও ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। এখানে প্রায় ৬ হাজার শ্রমিক কর্মরত। নদীর জলে তলিয়ে গেছে প্রায় ৩০ হেক্টর জমি, নষ্ট হয়েছে ২ হাজার চা গাছ, ১০০ ফুট রাস্তা, তিনটি কালভার্ট ও ৩০ ফুট লম্বা বাঁধ। স্থানীয়রা জানান, নদীর প্রবল স্রোতে হাজার হাজার চা গাছ ধুয়ে গেছে। কোথাও হাঁটু, কোথাও কোমরসমান জল। জল নামলেও চাষের জমিতে পড়ে থাকবে বালি ও নুড়ি পাথর। ফলে নতুন করে চা গাছ রোপণ প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকবে। টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গ শাখার সম্পাদক সুমিত ঘোষ জানিয়েছেন, প্রাথমিক হিসেবে ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ১১ কোটি টাকা। রাজ্য সরকার যেন দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত বাগানগুলির পুনর্গঠনে ব্যবস্থা নেয়, সেই আর্জি জানিয়েছেন তিনি। এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে সোমবার উত্তরবঙ্গ পরিদর্শনে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, বেশ কয়েকটি চা বাগানে জল জমে রয়েছে। দ্রুত সমীক্ষা চালিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তৃণমূল চা শ্রমিক ইউনিয়নের উত্তরবঙ্গের চেয়ারম্যান নকুল সোনার জানিয়েছেন, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারে প্রায় ৪০টি চা বাগান ক্ষতিগ্রস্ত। এর মধ্যে নাগরাকাটা ও বানারহাটে ১০টি করে, কালচিনিতে ১২টি ও মাদারিহাট-বীরপাড়ায় আরও পাঁচটি বাগান ক্ষতির মুখে। শ্রমিকদের দাবি, রাজ্য সরকার যদি তৎপর না হয়, তবে এই দুর্যোগের পর চা শিল্প ভয়াবহ সংকটে পড়বে।