দেশের রাজধানীতে কৃষক আন্দোলনের দিকে যখন সবার চোখ তখন উত্তরবঙ্গেও শুরু হল কৃষক বিক্ষোভ। শতাধিক কৃষকের বিক্ষোভ আছড়ে পড়ল তিস্তা পাড়ে। কারণ তিস্তা ব্যারেজ তৈরি করতে তাঁদের জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এবার তাঁরা কাজের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছেন। জলপাইগুড়ি ল্যান্ড লুজার অ্যাসোসিয়শনের ব্যানারে এই বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন কৃষককূল। তাঁরা তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের মুখ্য ইঞ্জিনিয়ারের দফতরের সামনে ধরনায় বসেছেন।
এই পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। কারণ এখন তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অফিসে কোনও আধিকারিক ঢুকতে পারছেন না। এই ধরনার জেরে সমস্ত প্রবেশপথ বন্ধ। পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় প্রকল্প হল—তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প। ১৯৭৫ সালে যোজনা কমিশনের অনুমতি পায় সেটি। আর কাজ শুরু হয় ১৯৭৬ সাল থেকে। উত্তরবঙ্গের সমস্ত জেলায় এখান থেকেই সেচের জল সরবরাহ হয়। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর, মালদহ, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের মাধ্যমেই সেচের জল সরবরাহ হয়।
এই বিষয়ে ল্যান্ড লুজার সংগঠনের সভাপতি নজরুল রহমান বলেন, ‘১৯৬৭ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপে ধাপে জমি নেওয়া হয়েছিল। আর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল ক্ষতিপূরণ এবং সরকারি চাকরি দেওয়া হবে। জমিদাতাদের প্রত্যেক পরিবারপিছু একজনকে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সেখানে মাত্র ৫০০ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছিল জলপাইগুড়ি জেলার মানুষজনকে।’ ২০০৮–২০০৯ সালে এই প্রকল্পকে জাতীয় প্রকল্প ঘোষণা করা হয়েছিল। ৪৫ বছর পরও এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হয়নি।
বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই বিক্ষোভ বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ ইতিমধ্যেই সেই বার্তা দিয়েছেন নজরুল রহমান। তিনি বলেন, ‘বাম আমলে বহু ছেলেমেয়ে চাকরি পেয়েছিল। কিন্তু এক দশক ধরে তৃণমূল সরকার শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’ যদি এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশ ব্যয় কেন্দ্রের আর ১০ শতাংশ ব্যয় রাজ্যের। ২০১৯ সালের শেষে ২৬ দিন অনশন পর্যন্ত করা হয়েছিল। তখন ডিসেম্বর মাসে বৈঠক করা হয়েছিল। কিন্তু প্রতিশ্রুতি ছাড়া কিছুই মেলেনি। যদিও দার্জিলিংয়ের বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তার দাবি, ‘জমির জন্য যারা এখন সমস্যায় রয়েছেন, তাদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’ রাজ্যের পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেন, ‘২০০৯ সালে আমি একটা বৈঠকের ব্যবস্থা করেছিলাম। তখন তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসেনি। কিন্তু ওরা সরকারি চাকরির দাবিতে অনড়। তারপর কী হয়েছে, জানি না।’