কদিন ধরেই তিস্তার ভয়াল রূপ দেখছেন উত্তরবঙ্গের মানুষজন। নাগাড়ে বৃষ্টির জেরে ফুলে উঠেছে তিস্তা নদী। আর সেই জলে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম। উত্তরবঙ্গের বর্ষা এখন শোকের। এখানে ‘স্পার’ বলে একটি বিষয় আছে। যার অর্থ–ভাঙন প্রতিরোধে বাঁধের সম্প্রসারিত অংশ। এখন এই ‘স্পার’ ভাঙছে রোজ। ফুঁসে ওঠা তিস্তার ধাক্কায় মানুষ এখন আতঙ্কিত। এই পরিস্থিতি ঠেকাতে তিস্তায় ‘ড্রেজিং’ অর্থাৎ নদীখাত খননের সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সেচ দফতর। ইতিমধ্যেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নদীখাত খননের বিশদ পরিকল্পনা তৈরি করতে। এই কাজ করতে মোটা অঙ্কের টাকা খরচ হবে। আর তা না করলে মানুষের বিপদ বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
২০২৩ সালে সিকিমের বিপর্যয় ঘটার পর তিস্তা নদী তার গতিপথ বদল করেছে এবং নদীখাতে পলি জমে উঁচু হয়ে গিয়েছে। এই দুটি কারণে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে তিস্তা নদী। এখন দেখা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি লাগোয়া বাকালিতে তিস্তা নদী বাঁধে সাতটি ‘স্পার’ মুখ ভেঙেছে। ২০২৩ সালের পাঁচটি ‘স্পার’ ক্ষতি হয়েছিল। এবার সিকিমের অবস্থা ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। আর তিস্তা নদী গতিপথ বদল করার জেরে আরও দু’টি ‘স্পার’ মাথা ভেঙেছে। এখন তিস্তা নদী বয়ে চলেছে গ্রামের সমান উচ্চতায়। তাই একাধিক গ্রামে জল ঢুকে পড়ছে। তিস্তা ব্যারাজ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ এখন বাড়ানো হয়েছে। তাই মেখলিগঞ্জে ‘লাল সতর্কতা’ জারি হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘মাসে অন্তত একদিন আপনারা আমাকে পাবেন’, মানুষকে কথা দিয়ে গেলেন সাংসদ রচনা
উত্তরবঙ্গ থেকে বিজেপির সাংসদরা জিতলেও তেমন কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ। এই ‘স্পার’ মুখ এবং মাথা ভাঙতে শুরু করলে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি হয়। কারণ এটা চলতে থাকলে গ্রামের পর গ্রাম জলের তলায় তলিয়ে যাবে। এই বিষয়ে সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (উত্তর–পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক বলেন, ‘তিস্তার গতিপথ বদল করার পরে সমীক্ষা হয়েছিল। সেই সমীক্ষার রিপোর্ট এসে গিয়েছে। এখানে নদীখাত উঁচু হয়ে গিয়েছে। সেটাও বিপদের ব্যাপার। তাই দ্রুত তিস্তা নদীর খাত থেকে পলি সরাতেই হবে। ভরা বর্ষায় তো এই কাজ করা সম্ভব নয়। বর্ষা কমলে এই কাজে হাত দিতে হবে। কারণ আজও স্পারের মুখ ভেঙেছে।’
উত্তরবঙ্গে বর্ষায় আনন্দের চেয়ে বেশি শোকের হয়ে পড়েছে। বানভাসী পরিস্থিতিতে জীবন–জীবিকার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, সেতু সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সেচ দফতর মনে করছে, এখন শুধু ‘স্পার’ রক্ষা করতে হবে। পরে শুরু হবে মেরামতির কাজ। আজও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর। যদিও সেচ দফতরের দাবি, বর্ষার শুরুতেই তিস্তার যা অবস্থা তাতে দ্রুত ‘ড্রেজিং’ করে পলি তোলা না হলে নদীর দু’পারের জনপদ রক্ষা করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে।