কোলে দেড় মাসের শিশু। কিন্তু টেট দেওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাননি হাওড়ার ডোমজুড়ের করোলার বধূ রুহিনা মোল্লা। বছরের পর বছর এই দিনটার জন্যই তো অপেক্ষা করছিলেন তিনি। পরীক্ষায় পাস করলে শিক্ষকতার চাকরির সুযোগ। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য় দুধের শিশুকে নিয়েই পরীক্ষাকেন্দ্রে চলে এসেছিলেন রুহিনা। সঙ্গে বোন তুহিনা আর বাবা খোকন মল্লিক। উলুবেড়িয়া কলেজের পরীক্ষাকেন্দ্রে শিশু কোলেই চলে এসেছিলেন রুহিনা।
দিদি পরীক্ষা দিচ্ছেন ভেতরে। প্রতি পদে স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। আর বোন বাইরে ছোট্ট শিশুকে নিয়ে প্রতীক্ষায়। কিন্তু ওইটুকু শিশু যে মাতৃদুগ্ধ পান করে। আর মা ছাড়া আর কতক্ষণ থাকবে ওই শিশু!
অগত্যা পরিবারের তরফে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয় যাতে শিশুটিকে দুধ খাওয়ানোর জন্য় একটু সময় দেওয়া হয়। সেই মতোই ব্যবস্থা করেছিল কলেজ কর্তৃপক্ষ। একটি আলাদা ঘরে মা রুহিনাকে আনা হয়। সেখানে পরিবারের এক সদস্য রুহিনার কোলে কিছুক্ষণের জন্য় শিশুটিকে তুলে দেন। সেই সময় এক মহিলা পর্যবেক্ষক কাছাকাছি ছিলেন। ঘণ্টাখানেক পরেই দুধের শিশুকে মায়ের কোলে তুলে দেওয়া হয়। তিনি দুধ খাওয়ানোর পরে ফের শিশুটিকে মায়ের কোল থেকে নিয়ে নেন পরিবারের সদস্যরা। ফের তিনি পরীক্ষা দিতে বসেন।
দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই। একটা চাকরির জন্য। রুহিনা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন পরে পরীক্ষা হল। এই পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বহরমপুরের এক পরীক্ষার্থীও কোলের শিশুকে নিয়ে গাড়ি চেপে কেন্দ্রে যান। অনেকে আবার ঠিকানা চিনতে না পেরে মারাত্মক সমস্যায় পড়ে যান।
তবে শুধু রুহিনাই নন, এদিন অনেকেই অনেক প্রতিকূলতাকে টপকে পরীক্ষা দিতে এসেছিলেন। বছরের পর বছর ধরে এই দিনটার জন্য়ই অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। বয়স পেরিয়ে যাচ্ছে অনেকের। সেকারণে সুযোগ ছাড়তে চাননি কেউই।