শিশুচুরি নিয়ে গুজবের জেরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছতে অবশেষে বারাসতের কাজিপাড়ায় বালকের দেহ উদ্ধারের ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃত অঞ্জিব নবি সম্পর্কে নিহত ফরদিন নবি (১১)র জ্যেঠু। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত জানিয়েছে, তালগাছ নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে বিবাদের জেরে ভাইপোকে খুন করেছে সে।
আরও পড়ুন - শিশুচুরির গুজবকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্র বারাসতের কাজিপাড়া, আক্রান্ত পুলিশও
পড়তে থাকুন - রাজভবনের সামনে অভিষেকের ধরনার অনুমতি দিয়ে অন্যায় করেছে পুলিশ, আদালতে মানল রাজ্য
গত ১৩ জুন বারাসতের কাজিপাড়ায় বাড়ির পাশেই একটি ঘর থেকে ফরদিন নবির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। পরিবারের সদস্য জানিয়েছেন, ৯ জুন থেকে নিখোঁজ ছিল ওই কিশোর। তার দেহ উদ্ধার হতেই এলাকায় পুলিসের প্রতি অনাস্থা তৈরি হতে থাকে। পরিবারের অভিযোগ, নিখোঁজের কথা জানালেও তদন্তে গা করেনি পুলিশ। তাহলে দেহ আরও আগে উদ্ধার করা যেত।
এই ঘটনার পর থেকে এলাকায় নানা রকম গুজব ছড়াতে শুরু করে। যার জেরে বুধবার রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে এলাকা। ভাঙচুর হয় পুলিশের গাড়ি। ওই ঘটনার পরদিনই নিহতের এক জ্যেঠুকে গ্রেফতার করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টায় নামল পুলিশ।
পুলিশের দাবি, ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায় ৯ জুন সন্য্যা ৭টা থেকে ৭টা ৩০ মিনিটের মধ্যে খুন করা হয়েছিল ফরহানকে। ঘটনার সঙ্গে পরিবারেরই কেউ যুক্ত তা প্রথম থেকে নিশ্চিত ছিলেন তদন্তকারীরা। কিন্তু ফরদিনের পরিবার অনেক বড় হওয়ায় আসল অপরাধীকে খুঁজে পেতে সময় লেগেছে। পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে নেমে খুনের সময় পরিবারের সদস্যরা কে কোথায় ছিলেন তা জানতে চান গোয়েন্দারা। এর পর তাদের মোবাইল ফোনের নম্বর নেওয়া হয়। প্রতিটি মোবাইল নম্বরের টাওয়ার লোকেশন ট্র্যাক করে দেখা হয় সেই ব্যক্তি যেখানে দাবি করেছেন সত্যিই সেখানে ছিলেন কি না। বাকিদের লোকেশন মিলে গেলেও অঞ্জিব নবি যেখানে ছিলেন বলে দাবি করেছিলেন সেখানে তাঁর টাওয়ার লোকেশন মেলেনি। বদলে দেখা যায় তিনি সেই সময় ঘটনাস্থলের আসেপাশেই কোথাও ছিলেন।
এর পরই তাকে তলব করে জেরা করা শুরু করেন তদন্তকারীরা। জেরায় অপরাধ স্বীকার করে নেয় অভিযুক্ত। জানায়, একটি তালগাছের মালিকানা নিয়ে ফরহানের বাবার সঙ্গে বিবাদ ছিল তার। সেই আক্রোশে ভাইপোকে খুন করেছেন তিনি।
আরও পড়ুন - গায়ের জোরে দখল করা জমিতে তৃণমূল পার্টি অফিস, ২০ দিনের মধ্যে ভাঙতে বলল হাইকোর্ট
এই ঘটনার তদন্তে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। প্রশ্ন হল, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে কি এলাকায় হিংসা ছড়ানোর অপেক্ষা করছিল পুলিশ? বিষয়টি ধামাচাপা দিতে কি তাদের কাছে কোনও নির্দেশ ছিল? কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়েছে বলেই কি রাতারাতি তৎপর হয়ে উঠলেন তদন্তকারীরা?