জেল থেকে ছাড়া পেতেই হাইকোর্টের নির্দেশ ফের হাজতবাস হয়েছিল তৃণমূল নেতা কুরবান শাহ খুনে মূল অভিযুক্ত আনিসুর রহমানের। সেই থেকে জেলবন্দি পাঁশকুড়ার বিজেপি নেতা আনিসুর। এবার আনিসুরের ফেসবুকে পোস্ট ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। কীভাবে জেলবন্দি থাকাকালীন সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করছেন আনিসুর, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। তবে তিনি নিজে তাঁর ফেসবুক প্রোফাইলটি চালান কি না, সেটা নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে বুধবার দেখা গেল জেলবন্দি আনিসুর রহমানের প্রোফাইলে করা পোস্টে লেখা হয়, ‘দীর্ঘ সময়কাল বারংবার মিথ্যা কেসে ফাঁসিয়ে যারা আজ হাঁফিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক সন্নাসের পথে, তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মোকাবিলা করতে, ‘কাল আসল খেলা।’
এছাড়াও আরও লেখা হয়, ‘ আমি আমার গুনাগ্রহী শুভাকাঙ্খী যারা রয়েছেন, তাদের জন্য আওহ্বান রইল। দয়া করে মারণব্যাধী করোনা থেকে সমাজ ও নিজেকে মুক্ত রাখতে অবশ্যই কোভিড বিধি মেনে, মাস্ক পরে তমলুক কোর্ট চত্বরে থাকবেন।’
রাজনৈতির বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর উল্লেখিত ‘আসল খেলা’ নিয়ে তিনি আজ যে জেল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন, সেটাই ওই পোস্টে স্পষ্ট করেছেন আনিসুর।
গত মার্চে তাঁর মামলা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। এই ঘটনার প্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন কুরবানের পরিবারের সদস্যরা। তাঁদের দাবি, আনিসুর মুক্তি পেলে খুনের বিচার হবে না। এমনকী, তাঁদের প্রাণের ঝুঁকি বাড়বে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন নিহতের পরিবারের সদস্যরা।
আদালতে মামলার সওয়াল জবাব শুনে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ‘আগে একাধিকবার আনিসুরের জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেছে রাজ্য সরকার। তাহলে এখন হঠাৎ কী হল যে, মামলা প্রত্যাহার করতে চাইছে তারা? এরপরেই রাজ্য সরকারের নির্দেশ ও তমলুক আদালতের যাবতীয় রায় খারিজ করে দেন বিচারপতি। একই সঙ্গে আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশও খারিজ করে দেয় হাইকোর্ট।তারপর আনিসুরকে গ্রেফতারেরও নির্দেশ দেন তিনি। এরপরেই কোলাঘাট থেকে গ্রেফতার করা হয় আনিসুরকে।
গত জানুয়ারিতে নন্দীগ্রামের তেখালির জনসভা থেকে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করতে গিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মুখে উঠে আসে আনিসুরের নাম। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, ‘আনিসুরকে অত্যাচার করে জেলে রেখে দিয়েছে।’
ওদিকে নিজের দলের নেতা খুনে অভিযুক্ত বিজেপি নেতার নাম নেত্রীর মুখে শুনে কুরবান শাহর পরিবার বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ব্যাখা, সেদিন মমতার নিশানায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী।
প্রসঙ্গত, ২০০৬ সাল পর্যন্ত সিপিএমে ছিলেন আনিসুর রহমান। এরপর নন্দীগ্রাম আন্দোলনের সময় তৃণমূলে যোগদান করেন তিনি। সেই সময় আনিসুরের বাইকে করেই নন্দীগ্রামে পৌঁছেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু ২০১৮ সালে বিজেপিতে যোগ দেন আনিসুর। এরপর ২০১৯ সালে খুন হন কুরবান শাহ। সেই ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় আনিসুরকে।