ছেলেধরা গুজব ছড়িয়ে পড়তেই উত্তপ্ত হয়েছে বারাসত। অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ছেলেধরা সন্দেহে সেখানে বেশ কয়েকজনকে গণপিটুনি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যদিও পুলিশ এনিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াচ্ছে। তারপরেও রাজ্যের অন্যান্য জায়গাতে ছেলেধরার আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সেরকমই দেখা গেল বারুইপুরে। সেখানকার ধোপাগাছির বটতলা এলাকায় এক মহিলাকে ছেলেধরা ভেবে মারতে উদ্যত হয়েছিলেন এলাকার কিছু যুবক। তাতে বাধা দেন এলাকার কিছু মানুষজন। পরে জানা যায়, ওই মহিলা অ্যালঝাইমারসে আক্রান্ত এবং বেশ কয়েক মাস ধরেই বাড়ি থেকে নিখোঁজ রয়েছেন। শেষ পর্যন্ত এলাকার মানুষজনের উদ্যোগে ওই মহিলাকে ফিরে পেল তাঁর পরিবার।
আরও পড়ুন: শিশু চুরির কোনও ঘটনা ঘটেনি, পুরোটাই গুজব, সচেতন করতে প্রচারে নামল বারাসত পুলিশ
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মহিলার নাম নুরসুনা বিবি। তিনি ডায়মন্ড হারবারের রামনগর থানা এলাকার বাসিন্দা। বুধবার রাত ১০ টা নাগাদ পাড়ার কিছু যুবক বছর পঞ্চাশের ওই মহিলাকে রাস্তায় ঘোরাফেরা করতে দেখেন। তবে পাড়ায় ছেলেধরা গুজব বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই ওই মহিলাকে দেখে যুবকদের সন্দেহ হয়েছিল। তখনই তারা মহিলাকে ধরে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করে। তবে মহিলা কিছুই বলতে পারেননি। ফলে তাদের সন্দেহ আরও বেড়ে যায়।
সেই সময় আরও কিছু যুবক মহিলাকে মারধর করার নিদান দেয়। তখনই গ্রামের এক কেবল অপারেটর যুবক এগিয়ে আসেন। তিনি যুবকদের বাধা দিয়ে মহিলার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। তাতে বোঝা যায়, মহিলা ছেলেধরা নয়। তিনি কোনওভাবে পথ ভুলে অনেক দূরে চলে এসেছেন। এরপর পাড়ার মহিলাদের ডেকে তাঁর খাবার এবং থাকার ব্যবস্থা করা হয়। এদিকে, হ্যাম রেডিওর সঙ্গে যোগাযোগ করেন ওই যুবক।
জানা যায়, মহিলা বারবার ডায়মন্ড হারবারের কথা বলছিলেন। তখন হ্যাম রেডিওর তরফে মহিলার খোঁজখবর শুরু করা হয়। এদিকে, রাত গভীর হওয়ায় গ্রামের একটি বাড়িতে মহিলার থাকার ব্যবস্থা করা হয়। অবশেষে মহিলার পরিবারের খোঁজ পেয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় সংস্থার তরফে। এরপর ভোর হতেই মহিলার ছেলে এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা এসে নুরসুনা বিবিকে নিয়ে যান।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, তিনি মাস খানেক আগে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। তাঁর ভুলে যাওয়ার রোগ আছে। তারপরে আর বাড়ি ফেরেননি। এরপর থানায় ডায়েরিও করা হয়। কিন্তু, তারপরে তাকে ফেরাতে সক্ষম হয়নি পুলিশ। মাকে ফিরে পেয়ে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ছেলে জাহির শেখ। ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাবের পক্ষ থেকে ছেলেধরা গুজবে কান না দেওয়ার জন্য মানুষকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।