অভাব, প্রতারণা, সাইবার ক্রাইম - কলকাতা লাগোয়া নরেন্দ্রপুরের রায় পরিবারের তিন সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যুর নেপথ্যে কি রয়েছে এমনই নানা কারণ? ঘটনা ঘিরে বাড়ছে রহস্য। তার প্রধান কারণ - স্বামী-স্ত্রী ও তাঁদের একমাত্র মেয়ের আত্মহত্যায় মূল অভিযুক্ত যে ব্যক্তি, তিনি নিজেও বর্তমানে কোমায় আচ্ছন্ন! ফলত, তদন্তে নেমে যথেষ্ট কালঘাম ছোটাতে হচ্ছে পুলিশকে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, এই ঘটনায় একই পরিবারের যে তিন সদস্যদের অপমৃত্যু হয়েছে, তাঁরা হলেন - জলি রায় (৫৫), তাঁর স্বামী দীপক রায় (৬৩) এবং তাঁদের একমাত্র মেয়ে দিশারী রায় (২৩)।
এঁদের মধ্যে জলি রায়ের মৃত্যু হয় গত বুধবার। গুরুতর অসুস্থ ও আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দীপক ও দিশারীর প্রাণ যায় পরদিন, অর্থাৎ - গত বৃহস্পতিবার।
ঘটনা প্রসঙ্গে এখনও পর্যন্ত যেটুকু তথ্য সামনে এসেছে, তা হল - রায় পরিবারের আর্থিক অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ ছিল। যার জেরে স্নাতক স্তরে প্রথম বর্ষের পরই পড়াশোনা ছেড়ে দেন দিশারী। মাঝখানে বেশ কিছুদিন একটি শপিং মল এবং পরে একটি ব্যাঙ্কে কিছুদিন কাজ করেন তিনি।
আত্মীয়দের দাবি, এই অনটনের মধ্যেই সাহায্য করার অছিলায় রায় পরিবারের সদস্যদের এক ভয়ঙ্কর ফাঁদে ফেলেন দেবব্রত বিশ্বাস নামে স্থানীয় এক যুবক। খুব সম্ভবত, রায় পরিবারের সদস্যদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ভাড়া নিয়ে কোনও বেআইনি লেনদেন চালাতেন দেবব্রত। টাকা পাওয়ার আশায় দেবব্রতর প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান রায় পরিবারের সদস্যরা। উপরন্তু, সেই বেআইনি টাকার বেশ খানিকটা অংশ তাঁরা খরচও করে ফেলেন।
এদিকে, সম্প্রতি দিল্লির কোনও একটি সাইবার ক্রাইম থানা থেকে রায় বাড়িতে ফোন আসে। আর্থিক জালিয়াতির মামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে তাঁদের গত ১২ ডিসেম্বর দিল্লিতে ডেকে পাঠানো হয়।
একদিকে অভাব, অন্যদিকে প্রতারণা চক্রে জড়িয়ে সম্মানহানির ভয়। আত্মীয়দের দাবি, এই কারণেই নিজেদের একেবারে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন রায় পরিবারের তিন সদস্য।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, দিশারীর মাসি জানিয়েছেন, বুধবার রাতেই বাবা-মাকে প্রচুর পরিমাণ ঘুমের ওষুধ খেতে দেন ওই তরুণী। তারপর নিজেও অনেকগুলি ঘুমের ওষুধ খান। কিন্তু, বৃহস্পতিবার সকালে তাঁর ঘুম ভেঙে যায়। তিনি বুঝতে পারেন, ওষুধে পুরোপুরি কাজ হয়নি। এরপর নিজের হাতের শিরা কেটে ওই অবস্থাতেই বাবা-মায়ের বিছানার পাশে বসে থাকেন তিনি।
এই সময়েই দিশারীর মাসি তাঁদের বাড়িতে আসেন। ওই আত্মীয়ার দাবি, সেদিন দিশারীই দরজা খুলে দিয়েছিলেন এবং মাসিকে সব জানিয়েছিলেন। এরপর দিশারী ও তাঁর বাবাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কারণ, দিশারীর মায়ের আগেই মৃত্যু হয়েছিল। কিন্তু, বৃহস্পতিবার দীপক ও দিশারীরও মৃত্যু হয়।
এই পরিবারের সদস্যরা একটি সুইসাইড নোট লিখে রেখে গিয়েছেন বলে দাবি সূত্রের। তাতে স্থানীয় বাসিন্দা দেবব্রতকেই গোটা ঘটনার জন্য দায়ী করেছেন তাঁরা। কিন্তু, একটি বাইক দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে দেবব্রত বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি কোমায় রয়েছেন। ফলত, তাঁর সঙ্গে কথা বলার কোনও সুযোগই পাননি তদন্তকারীরা।