২০১১ সালের দিকে তাকালে দেখা যায়, তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের কৃষির ওপর ভিত্তি করে শিল্পের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে গিয়ে কৃষিজমি কেড়ে নিচ্ছিল কৃষকদের কাছ থেকে। এই হাওয়া বইতে শুরু করতেই ৩৪ বছরের রেজিমেন্টেড পার্টি সরে যেতে হল তৃণমূলের কাছে নির্বাচনে। তারপর সময় গড়িয়েছে অনেক। এখন এই রাজ্যের ৪০ হাজার ২০৩টি গ্রামকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। কারণ আর ৬ মাস পর এই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন।
বাংলা দখল করতে হলে গ্রামীণ ভোটব্যাঙ্ক থাকা বাধ্যতামূলক। তাই গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জনমত গড়ে তুলতে চাইছে গেরুয়া শিবির। পথ মসৃণ করতে তাই আগেই কৃষকদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে যেতে চাইছেন দিলীপ ঘোষরা। বাদল অধিবেশনে পাশ হওয়া কৃষি আইন নিয়ে কৃষকদের বক্তব্য শুনতে চান তাঁরা। আর বোঝাতে চান কৃষি আইনের তাৎপর্য।
ইতিমধ্যেই মাঠে নেমে লড়াই করতে শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল–সিপিএম। এই দুই দলই এখন বিজেপিকে রুখতে মরিয়া। বিজেপি যে গ্রামের ভেতরে ভেতরে ঢুকতে চাইছে তা তারা বুঝতে পারছে। কারণ এই পথ ছাড়া ২৯৪ আসনের বিধানসভায় গেরুয়া শিবিরের বড় কোপ বসানো সম্ভব নয়।২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে তপ্ত হয়ে ওঠে গ্রামবাংলা। সেখানে কিছু ভোট পেলেও বিজেপি বিশেষ সুবিধা করতে পারেনি। কিন্তু ২০১৯ সালে পরিস্থিতি পাল্টেছে। লোকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসন পেয়েছে বিজেপি। তাই গ্রামীণ ভোট বাড়াতে বিশেষ জোর দিচ্ছে তাঁরা।
বিজেপি’র কিষান মোর্চার সভাপতি মহাদেব সরকার হিন্দুস্থান টাইমসকে বলেন, ‘আগামী ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত কৃষিজমি এলাকায় পরিদর্শনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেখানে নতুন আইনগুলি নিয়ে আলোচনা হবে। ১৬ অক্টোবর থেকে সভা–সমাবেশ হবে ১৪ হাজার সাংগঠনিক কেন্দ্রে।আর ১৮ থেকে ২০ অক্টোবর পঞ্চায়েত সমিতি এলাকায় হবে সেমিনার।’
দলীয় সূত্রে খবর, এই সেমিনারগুলিতে কলকাতা থেকে নেতৃত্ব যাবে গ্রাম বাংলায়। ইতিমধ্যেই মহাদেব সরকার কৃষকদের সঙ্গে দেখা করেছেন। নদিয়া জেলার রানাঘাটে গিয়ে তিনি দেখা করেছেন। এখানের অঙ্কটা হল, ২০১১ সালে তৃণমূল এখানে জয়ী হয়। ২০১৪ সালে তৃণমূল এখানে ৫৪ শতাংশ ভোট পায়। আর ২০১৯ সালে সেই ভোটব্যাঙ্ক ঘুরে গিয়ে ৫৩ শতাংশ ভোট পায় বিজেপি। সুতরাং এখানে সম্ভাবনা দেখছে গেরুয়া শিবির।
এই বিষয়ে ইতিহাসের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন মহাদেব সরকার। তিনি জানান, ১৯৭৭ সালে যখন সিপিএম ক্ষমতায় এসেছিল তখন তাঁদের স্লোগান ছিল লাঙল যার জমি তার। কৃষকদের ভোট পেতে এটাই ছিল তাদের স্লোগান। কিন্তু তারপরে নতুন করে কৃষকদের জন্য কোনও কৃষি নীতি নিয়ে আসেনি।আর তৃণমূলও ক্ষমতায় আসার পর একই পথে হেঁটেছে। সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিক প্রকল্প নিয়ে এসেছে কৃষকদের জন্য। এছাড়া কৃষি অধ্যুষিত এলাকা থেকে সিপিএমের ভোট বিজেপিতে এসে পড়েছিল ২০১৯ সালের নির্বাচনে।
তবে সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম উত্তর দিনাজপুরে এসে নতুন কৃষি আইন এবং তৃণমূলের নীতির বিরুদ্ধে প্রচার করেছেন। তণমূলও সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্যসভার সদস্য ঋতব্রত ব্যানার্জিকে দলে নিয়ে কেন্দ্রের নয়া কৃষি বিল এবং সিপিএমের বিরুদ্ধে প্রচার করাচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু মনে করেন, ‘আমাদের গ্রামের মানুষকে কোনটা ভাল কোনটা খারাপ বুঝিয়ে লাভ হবে না। বরং এখানে মানুষের অভাব, অভিযোগ শুনতে হবে। তাদের সমস্যাকে অনুভব করতে হবে। সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের ক্ষেত্রে স্থানীয়রা বিক্ষোভে নেমে পড়েছিল। তারা সমস্যাটা জানত। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেটাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল।’