'জমি চোর বুদ্ধ' (#JomiChorBuddho) - সিঙ্গুর নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণের পর সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করতে শুরু করলেন তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকরা। সেই হ্যাশট্যাগ ব্যবহারের আর্জি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতা দেবাংশু ভট্টাচার্যও।
শুক্রবার সকাল থেকেই টুইটারে '#JomiChorBuddho' লিখে বিভিন্ন পোস্ট করতে থাকেন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। একাধিক পুরনো ছবি, সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের ছবি পোস্ট করেছেন। কেউ কেউ তো টুইটারে নিজেদের নামের জায়গায় '#JomiChorBuddho' করে দিয়েছেন। সেভাবেই টুইটারে সিপিআইএমের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন।
তেমনই একজন অভিযোগ করেছেন, 'সিঙ্গুর হোক বা নন্দীগ্রাম, বুদ্ধবাবুর (বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য) জমি অধিগ্রহণ সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক ছিল। কোনওক্ষেত্রেই চাষিদের সঙ্গে আলোচনা করা হয়নি, জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে কৃষকদের অনুমতি চাওয়া হয়নি, উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি, জমির মালিকদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। সংক্ষেপে বলতে গেলে কম দামে তাঁরা জমি চুরি করে নিয়েছেন। '
তৃণমূলের একটি ফ্যানপেজের তরফে আবার বলা হয়েছে, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়: সকলকে জমি ফিরিয়েছেন। সিপিএম: মানুষের জমি চুরি করেছে।' ওই ফ্যানপেজের অপর একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, 'চাষিদের উপর অত্যাচার, ধর্ষণ; পুলিশ দিয়ে অত্যাচার; ক্যাডার দিয়ে অত্যাচার - সিঙ্গুরে কিছুই বাকি রাখেননি #জমি চোর বুদ্ধ।'
আরও পড়ুন: আমাদের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার জন্য টাটারা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল, তাও কিছু বলিনি: মমতা
বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাংশু। যিনি বৃহস্পতিবারও রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে ‘জমি চোর’ বলে আক্রমণ শানান। আজ (শুক্রবার) সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টও করেন তৃণমূলের মুখপাত্র। টুইটারে '#JomiChorBuddho' ('জমি চোর বুদ্ধ') হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ডংয়ের ছবি পোস্ট করে দেবাংশু লেখেন, ‘ভারত জুড়ে রব উঠেছে #JomiChorBuddho আপনিও সামিল হোন...।’
মমতা কী বলেছিলেন?
গত বুধবার শিলিগুড়িতে বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী দাবি করেন, সিঙ্গুরকে টাটা গোষ্ঠীকে তৃণমূল তাড়ায়নি। সিপিআইএম তাড়িয়েছিল। তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ বাজে কথা বলছে। (তাঁরা বলছেন) টাটাকে (নাকি) আমি তাড়়িয়েছি। আর টাটা চাকরি দিচ্ছে। টাটাকে আমি তাড়াইনি। তাড়িয়েছে সিপিএম। আপনারা (সিপিআইএম) লোকের জমি জোর করে দখল করতে গিয়েছিলেন।’
আরও পড়ুন: টাটাকে তাড়ানোর জন্য অনুতপ্ত হলে রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে মমতার আদালতে যাওয়া উচিত
সিঙ্গুরের ইতিবৃত্ত
- ২০০৬ সালের ১৮ মে: সিঙ্গুরে গাড়ি নির্মাণের প্রকল্পে ঘোষণা করেছিলেন রতন টাটা।
- ২০০৬ সালের ২৫ মে: ৯৯৭ জমি অধিগ্রহণ নিয়ে শুরু হয়েছিল বিক্ষোভ।
- ২০০৬ সালের ৩ ডিসেম্বর: ওই বছরের সেপ্টেম্বরে বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জের অভিযোগ উঠেছিল। তারপর ৩ ডিসেম্বর থেকে অনশন শুরু করেছিলেন মমতা। চলেছিল ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
- ২০০৭ সালের ৯ মার্চ: টাটার হাতে এসেছিল সিঙ্গুরের জমি। ততদিন কারখানার জমির চারপাশে বেড়া তৈরির কাজ হয়ে গিয়েছিল।
- ২০০৮ সালের ১৮ জানুয়ারি: জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের স্বস্তি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের। রাজ্যের পক্ষে রায় দিয়েছিল উচ্চতর আদালত।
- ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর: সিঙ্গুরে কারখানার কাজ স্থগিত করে দিয়েছিল টাটা।
- ২০০৭ সালের ৩ অক্টোবর: কাজ স্থগিত করার পাক্কা এক মাস পরে রতন টাটা ঘোষণা করেছিলেন, সিঙ্গুর থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে ন্যানো প্রকল্প। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘(আগে) বলেছিলাম, বন্দুক ঠেকালেও যাব না। কিন্তু মমতা তো ট্রিগার টিপে দিলেন।’
- ২০১১ সালের জুন: ক্ষমতায় এসে সিঙ্গুরে জমি ফেরাতে আইন তৈরি করেছিল তৃণমূল সরকার। হাইকোর্টে মামলা টাটা গোষ্ঠীর। খারিজ হয়ে গিয়েছিল সেই মামলা। সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল টাটা। সেই মামলা ফেরত পাঠানো হয়েছিল হাইকোর্টে।
- ২০১২ সালের জুন: সিঙ্গল বেঞ্চে জয় পেয়েছিল রাজ্য। ডিভিশন বেঞ্চে গিয়েছিল টাটা। হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে ধাক্কা খেয়েছিল রাজ্য। সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা মমতার সরকারের।
- ২০১৬ সালের ৩১ অগস্ট: সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ অসাংবিধানিক বলে রায় সুপ্রিম কোর্টের।