রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার পর কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘তৃণমূলের স্তম্ভগুলি ভেঙে পড়লে দলটা আর ক্ষমতায় থাকবে না।’ শুভেন্দুর ধাক্কা এখনও সামলে উঠতে পারেনি তৃণমূল কংগ্রেস। তারমধ্যেই এবার দক্ষিণ দিনাজপুরের গঙ্গারামপুরের প্রাক্তন বিধায়ক সত্যেন রায় বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসলেন। সত্যেনের হুমকি, ‘দল যদি আমার গুরুত্ব না বোঝে তাহলে আমিও বিদ্রোহ করব।’ সুতরাং তৃণমূলের একের পর এক স্তম্ভ নড়বড় করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
কোচবিহারের মিহির গোস্বামী ইতিমধ্যেই গেরুয়া শিবিরে নাম লিখিয়েছেন। শীলভদ্র দত্ত বেসুরো গেয়েই চলেছেন। তারই মধ্যে দল যদি এবার তাঁকে বিধানসভার টিকিট না দেয় তাহলে দল ছাড়ার ইঙ্গিতও দিয়েছেন তৃণমূলের তফসিলি জাতি–উপজাতি মোর্চার জেলা সভাপতি সত্যেন। তাঁর এই ঘোষণায় দক্ষিণ দিনাজপুরে তৃণমূলে জোর চর্চাও শুরু হয়েছে। সত্যেনবাবু বুঝতে পেরেছেন দল তাঁকে টিকিট না দিয়ে এখানে নতুন মুখ আনতে চাইছে। আর তা ঠিক করে দিয়েছেন প্রশান্ত কিশোর। এই খবর তাঁর কানে যাওয়ার পর থেকেই নিজের রাস্তা পরিষ্কার করে রাখলেন সত্যেন রায়।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে প্রথমবার নির্বাচনে দাঁড়িয়ে গঙ্গারামপুর থেকে তৃণমূলের বিধায়ক হয়েছিলেন সত্যেন রায়। বিধায়ক হওয়ার পরই তৎকালীন জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্রের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে বিপ্লব-বিরোধী গোষ্ঠীতে ‘নাম’ লিখিয়েছিলেন এই নেতা। বিপ্লবের পর অর্পিতা ঘোষ জেলা সভাপতি হলে তার সঙ্গেও দূরত্ব তৈরি হয় সত্যেনের। বর্তমান জেলা সভাপতি গৌতম দাসের সঙ্গেও সম্পর্ক খুব ভাল নয় তাঁর। সেই রিপোর্ট রয়েছে তৃণমূলের কাছেও। গত বিধানসভা নির্বাচনে গঙ্গারামপুর থেকে সত্যেনকে হারিয়েছিলেন বাম–কংগ্রেস জোট। তারপর জয়ী প্রার্থী কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। যা মেনে নিতে পারেননি সত্যেন।
এখন তিনি টিকিট চান। না হলে দল ছেড়ে দেবেন বলেও খবর। দল ছেড়ে দিয়ে তিনি বিজেপিতে যোগ দেবেন বলে জেলায় কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে। যদিও সত্যেনের অভিযোগ, তিনি তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে দল করলেও দল গুরুত্ব দেয়নি। সেই ধারা এখনও বজায় রয়েছে। মিহির গোস্বামীর মতোই তিনি বলেন, ‘আমার প্রতি অনেক অন্যায়, অবিচার হয়েছে৷ অনেক অপমানিত হয়েছি। তার পরেও দল করছি। যদি অবিচার হয় তা হলে আমি বিদ্রোহ করব। দল যদি বিধানসভার টিকিট না দেয় তাহলে আমি অন্য কিছু ভাবব। দলকে আমার গুরুত্ব বুঝতে হবে। এটা আমি রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সীকে জানিয়েছি।’
তবে সত্যেন–প্রসঙ্গে বিজেপি সাংসদ সুকান্ত মজুমদার বলেন, ‘তৃণমূলে ভালো মানুষরা কাজ করতে পারেন না। অনেকেই তাই দল ছেড়েছেন। আমাদের দরজা খোলা আছে।’ সুতরাং তৃণমূল টিকিট না দিলে তিনি বিজেপির টিকিটে লড়বেন তা মোটামুটি দু’পক্ষই ঠিক করে ফেলেছেন।