তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহা এবং জেলা পরিষদ সদস্য টিনা সাহা ভৌমিককে এবার কড়া নির্দেশ দিল তৃণমূল কংগ্রেস। টিনার লাগামহীন অভিযোগের ভিত্তিতেই বিপদে পড়েছেন তাপস বলে অভিযোগ। আবার তাপসের পাল্টা আক্রমণে টিনার পরিবর্তে দলের ভাবমূর্তি বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কারণ এই দু’জন নেতা–নেত্রী নিজেদের মধ্যের বিরোধ প্রকাশ্য সংবাদমাধ্যমে তুলে ধরছেন। আর তাতেই অস্বস্তি বাড়ছে তৃণমূল কংগ্রেসের। এই পরিস্থিতিতে মিডিয়ার সামনে বিতর্কিত বিষয়ে মুখ না খোলার নির্দেশ দু’জনকেই দিল তৃণমূল কংগ্রেস।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? টিনা–তাপস উভয়েই প্রকাশ্যে পরস্পরের বিরুদ্ধে নানা কটূ মন্তব্য করার ফলে দলের কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের উত্তর সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান নাসিরুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘পরস্পরের নামে কটূ কথা বলায় দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তার রেশ অন্য ব্লকে গিয়েও পড়ছে। তাই দুই নেতা–নেত্রীকে মিডিয়ার সামনে মুখ খুলতে নিষেধ করা হয়েছে। জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে হওয়া বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’ সম্প্রতি তাপস সাহার বাড়িতে হানা দিয়েছিল সিবিআই। এমনকী তারপর তাঁকে নিজাম প্যালেসে ঢেকে পাঠানো হয়েছিল। সুতরাং নিজেদের মধ্যে বিরোধ এড়িয়ে চলতেই এমন নির্দেশ বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন দু’জনের মধ্যে এমন বিরোধ? একুশের নির্বাচন থেকেই তাপস–টিনার দ্বন্দ্ব শুরু হয়। তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হন তাপস সাহা। আর জেলা পরিষদ সদস্যা টিনার বিরুদ্ধে বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাঁকে হারানোর অভিযোগ তোলা হয়েছে। সেখান থেকেই নানা ইস্যুতে উভয়ের মধ্যে দ্বন্দ্বের পারদ চড়তে থাকে। সম্প্রতি ভাইরাল হয় একটি অডিয়ো টেপ। (সেই অডিয়ো টেপের সত্যতা ‘হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা ডিজিটাল’ যাচাই করেনি।) সেখানে প্রাইমারি ও আপার প্রাইমারির চাকরি দেওয়া এবং টাকার লেনদেনের বিষয়ে দুই ব্যক্তির কথোপকথন শোনা যায়। এই নিয়ে বিজেপি নেতা তথা আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারি দাবি করেন, একটি কণ্ঠ হচ্ছে তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার।
তারপর ঠিক কী ঘটল? বিজেপি নেতার অভিযোগ সম্পূর্ণ উড়িয়ে দিয়ে তাপসবাবুর দাবি, ওই কণ্ঠস্বর তাঁর নয়। আর এসবের পিছনে রয়েছেন জেলা পরিষদের সদস্য টিনা সাহা ভৌমিক। এমনকী টিনাদেবীর চাকরি পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে দেন তাপস সাহা। দুই নেতা–নেত্রীর এই আকচা আকচিতে দলকে বিব্রত হতে হচ্ছে। তাই দু’দিন আগে এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সংবাদমাধ্যমের সামনে এই দুই নেতা–নেত্রী কোনও কথা বলবেন না। সেটা তাঁদের জানিয়েও দেওয়া হয়। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস, জেলার দলীয় বিধায়ক থেকে শীর্ষ নেতৃত্ব। এই বিষয়ে বিধায়ক তাপস সাহা বলেন, ‘দল কথা বলতে বারণ করেছে। তাই যা বলার দল বলবে।’