একদিন আগেই তাঁর কাছে ফোন এসেছিল। কী কথা হয়েছে? তা কোনও পক্ষই খোলসা করেননি। শুধু শরীরী ভাষা, মুখের ভাষা এবং কাজের ধরণে পরিবর্তন এল। তাই দেখে মনে হচ্ছে কাজ হয়েছে। এবার সমস্যা মিটবে। ফোনের দু’প্রান্তে ছিলেন অনুব্রত মণ্ডল এবং স্বয়ং সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ফোন করে বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলকে নির্দেশ দিয়েছিলেন সকলে কোর কমিটির সঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডল কোর কমিটির সদস্য নন। কারণ তিনি তিহাড় জেলে থাকার সময় এই কোর কমিটি গড়ে ওঠে। অথচ কোর কমিটির বৈঠক ডাকবেন বলে ঘোষণা করলেন বীরভূমের তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল।
বীরভূমের নানা প্রান্তে বিজয়া সম্মিলনী হচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে এই অনুষ্ঠান হলেও একাই তা করছেন অনুব্রত মণ্ডল বলে অভিযোগ। প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে, কাজল শেখ অনুপস্থিত। তা নিয়ে বিতর্ক চরমে উঠেছে। তিহাড় জেলে যাওয়ার আগে যেভাবে দল বা সংগঠন চালাতেন অনুব্রত, জেল থেকে বেরিয়ে একই পথেই হাঁটছেন তিনি। অথচ তাঁর অবর্তমানে কোর কমিটিই নির্বাচন থেকে শুরু করে সংগঠন মজুবত ভিতের উপর ধরে রাখার কাজ করেছিল। সেখানে অনুব্রতর কাজকর্ম নিয়ে খুব ক্ষুব্ধ কোর কমিটির সদস্যরা। কাজল শেখের সঙ্গে সেই দূরত্ব দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ। যা নিয়ে নালিশ গিয়েছে নেত্রীর কাছে বলে সূত্রের খবর।
আরও পড়ুন: ‘এনআইএ, সিবিআই, ইডি বিজেপির শাখা সংগঠন’, উপনির্বাচনের আগে বিস্ফোরক মন্তব্য পার্থর
তারপরই ফোন আসে কেষ্টর কাছে। বুঝিয়ে দেওয়া হয় কেমন করে আগামী দিনের পথ চলতে হবে। কিন্তু তারপরও মুখে যা বলছেন কেষ্ট কাজে তা করছেন না বলেই অভিযোগ উঠেছে। এই কোর কমিটির সদস্যদের মধ্যে আছেন— রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা, বিধানসভার উপাধ্যক্ষ আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিনহা, সিউড়ির বিধায়ক বিকাশ রায়চৌধুরী, জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেতা সুদীপ্ত ঘোষ। আর এখানের বিজয়া সম্মিলনীর অনুষ্ঠান থেকে অনুব্রত মণ্ডল বলেন, ‘কালীপুজো, ভাইফোঁটা, ছটপুজো যাক। আমি জেলা কমিটির মিটিং ডাকব। কোর কমিটির মিটিং ডাকব। তারপর কলকাতা যেভাবে বলবে, সেভাবে চলব।’
কিন্তু এখন প্রশ্ন উঠছে, অনুব্রত কোর কমিটির সদস্য না হয়েও কেমন করে বৈঠক ডাকবেন? অনুব্রত মণ্ডল কদিন ধরেই বলে আসছেন, তিনি কোনও নেতা নন। তিনি একজন কর্মী মাত্র। তৃণমূল কংগ্রেসের সৈনিক। আর একবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জিতিয়ে মুখ্যমন্ত্রী করতে চান। তারপর তিনি রাজনীতি ছেড়ে দেবেন। জেলা সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেবেন। দলের একজনই নেতা তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর সবাই একসঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তে হবে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের কথায়, ‘কোর কমিটির মিটিং ডাকব। দলের যদি কোন কেউ ভুল করে থাকে বা যদি কেউ অন্যায় করে থাকে, আমিও যদি কোনও ভুল করে থাকি তাহলে আমাকেও বাদ দেওয়া হোক।’