এনআইএ মামলা থেকে মুক্তি পেয়ে জঙ্গলমহলে ফিরেছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক ছত্রধর মাহাতো। তারপর থেকেই দলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল তাঁর। এমনকী তাঁর অনুগামীদের অনুষ্ঠিত সংবর্ধনা সভায় যোগ দিয়ে সরাসরি তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে নানা কড়া কথা বলেছিলেন। আর দাবি মানা না হলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, লড়াই করে নিজের অধিকার ছিনিয়ে নেওয়ার। এবার নতুন স্লোগান তৈরি করলেন ছত্রধর মাহাতো। নিজের গ্রামের উন্নয়নের অধিকার ছিনিয়ে নিতে প্রত্যেক গ্রামে ‘আপনা গাঁও, আপনা রাজ’ কমিটি চালু করতে চান তৃণমূল কংগ্রেসের এই প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক।
ইতিমধ্যেই সব পুরনো মামলা প্রত্যাহারের দাবি তুলেছেন ছত্রধর। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মনে করিয়ে দিয়েছেন, মামলা থেকে মুক্তি দেওয়ার আশ্বাস একদা তিনিই দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে কাজের জায়গা যদি না মেলে তাহলে আন্দোলন করতে হবে বলে বার্তা দিয়েছেন ছত্রধর। এখন জঙ্গলমহলে জনসাধারণ কমিটির যেসব লোকজন নিষ্ক্রিয় ছিলেন ছত্রধরকে পেয়ে তাঁরা অতিসক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আর এই ছত্রধর মাহাতোর বাড়তি সক্রিয় হওয়া নিয়ে ভাবছে তৃণমূল কংগ্রেস। ঝাড়গ্রাম জেলায় তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব আছে। তারপর যদি ছত্রধরও বেঁকে বসেন তাহলে হিতে–বিপরীত হবে।
আরও পড়ুন: ‘এটা একেবারেই ঠিক নয়’, বিধানসভায় পা রেখেই স্পিকারের ধমক খেলেন ছয় বিধায়ক
শনিবার ঝাড়গ্রামে লোধাশুলির পথসাথী ভবনে ছত্রধরের সংবর্ধনা সভা করা হয়। সেখানে ছিলেন তাঁর পুরনো সঙ্গীরা। তাঁদেরকে সক্রিয় করে তুলতেই ভোকাল টনিক দিচ্ছেন ছত্রধর বলে মনে করা হচ্ছে। তাই পুরনো সঙ্গীদের সভায় ছত্রধর বললেন, ‘কেমন করে অধিকার আদায়ের লড়াই করতে হয়, আমরা বিগত দিনে করে দেখিয়েছি। আমাদের কাছে সে পথ তো খোলা আছে। এক যুগেরও বেশি জেল খেটেছি। দরকার হলে আবার জেলে যাব! যে সব মানুষজনকে বামফ্রন্ট সরকার মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে সেগুলি প্রত্যাহার করে তাঁদের সম্মান।’ ছত্রধর এখন নিজের ওজন বোঝাতে জঙ্গলমহলে গ্রামোন্নয়নের দিকটি তুলে ধরছেন। যোগ্য বহু মানুষ সরকারি পরিষেবা থেকে বঞ্চিত বলে তাঁর দাবি।
তোলাবাজি, ঠিকাদারি, বালি মাফিয়ারাজের ঘটনায় ক্ষোভ বাড়ছে। তাই জঙ্গলমহলের মানুষের হৃদয় জিততে ছত্রধর জনজাতি–কুড়মি ভারসাম্যের তাস খেলতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে। সাঁওতাল, ভূমিজ, মুন্ডা–সহ কিছু সম্প্রদায় আছে জঙ্গলমহলে। কুড়মিরাও নানা এলাকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ। তাই স্লোগান তৈরি করে জনজাতিদের কাছে টানতে চাইছেন ছত্রধর। চুয়াড় বিদ্রোহের শহিদ রঘুনাথ মাহাতোর স্লোগান ছিল— ‘আপনা গাঁও, আপনা রাজ, দূর ভাগাও বিদেশি রাজ’। এই বিষয়ে ছত্রধরের বক্তব্য, ‘আমাদের জন্মস্থান মায়ের সমতুল্য। মায়ের সন্তানদের অবমাননা এবং বঞ্চনা দেখে চুপ করে থাকা যায় না। ‘আপনা গাঁও, আপনা রাজ’ স্লোগান নৈরাজ্য সৃষ্টি জন্য নয়। বরং প্রত্যেকটি গ্রামের উন্নয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের অধিকার চাইছি।’